• আমাদের দাওয়াত : সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর। আসুন! পবিত্র কুর‘আন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি।

13 October, 2022

অধিকাংশ মানব সমাচার (৩য় কিস্তি)

__ মুহাম্মাদ লিলবর আল-বারাদী


৬. অধিকাংশ মানুষ মূর্খ ও পথভ্রষ্ট :

সমাজটা দিনে দিনে সুশিক্ষার অভাবে বিবেক বর্জিত হয়ে খোঁড়া সমাজে পরিণত হচ্ছে। মানুষ মানুষকে সম্মান বা অসম্মান করে তার জ্ঞান ও বিবেকের মানদন্ডের ওপর। কিন্তু বর্তমানে বিবেক বর্জিত ও জ্ঞান খর্বিত জাতি মূর্খদের মত ক্ষমতা, সম্পদ ও সুন্দর ত্বকের মূল্যায়ন করে যাচ্ছে। মানুষের জ্ঞান ও বিবেক যেভাবে লোপ পাচ্ছে, ঠিক সেভাবেই জ্ঞানের ধারাবাহিকতা পরিহার করে মূর্খতাকে তালাশ করছে। মানুষ যখন শয়তানের বশীকরণ শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে যায়, তখন তাদের সামনে যতই দ্বীনের মু‘জিযা দেখানো হোক না কেন, তবুও তারা মূর্খতা প্রকাশ করবে। আল্লাহ বলেন,‌‌وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَا إِلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَى وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ ‘আর যদি আমি তাদের নিকট ফেরেশতা নাযিল করতাম এবং মৃতরা তাদের সাথে কথা বলত। আর সবকিছু সরাসরি তাদের সামনে সমবেত করতাম, তাহ’লেও তারা ঈমান আনত না, যদি না আল্লাহ চাইতেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মূর্খ’ (আনআম ৬/১১১)। পৃথিবীর অধিবাসীদের অধিকাংশই পথভ্রষ্ট (ইবন কাছীর)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلَقَدْ ضَلَّ قَبْلَهُمْ أَكْثَرُ الْأَوَّلِينَ ‘আর এদের পূর্বে প্রাথমিক যুগের অধিকাংশ মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছিল’ (ছাফফাত ৩৭/৭১)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ ‍‘আর তুমি আকাঙ্খা করলেও অধিকাংশ মানুষ মুমিন হবার নয়’ (ইউসুফ ১২/১০৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি আপনি যমীনের অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে’ (আন‘আম ৬/১১৬)। সুতরাং অধিকাংশ মানুষ ঈমান না আনলে আপনার কিছু করার নেই। আপনি চাইলেই কাউকে হিদায়াত দিতে পারবেন না’ (কুরতুবী)।

ক্বিয়ামতের পূর্বে সুশিক্ষার হার কমে যাবে এবং মূর্খদের দ্বারা সমাজ ভরে যাবে। আর এই ধরনের অজ্ঞ ব্যক্তিরাই সমাজের নেতৃত্ব দিবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ أَيَّامُ الْهَرْجِ، يَزُولُ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرُ فِيهَاالْجَهْلُ- ‘ক্বিয়ামতের পূর্বে হারজ অর্থাৎ হত্যাকান্ড শুরু হবে। তখন ইলম বিলুপ্ত হবে এবং মূর্খতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে’।[1]

অধিকাংশ মানব সমাচার (২য় কিস্তি)

___ মুহাম্মাদ লিলবর আল-বারাদী


ঘ. লোকের দোষ-ক্রটি তালাশকারী :

মানুষের দোষ-ক্রটি তালাশ করা গর্হিত কাজ। সর্বদা অন্যের নয়, নিজের দোষ-ক্রুটি তালাশ করা উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) মানুষের দোষ ও ছিদ্রান্বেষণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি মানুষকে স্ব-স্ব দোষত্রুটি সংশোধনে আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহর কাছে যেসব কথাবার্তা-ধ্যানধারণার মূল্য নেই তা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বোপরি মুসলিম ভাইয়ের ছিদ্রান্বেষণকারীর অন্তরে ঈমান থাকে না। আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِى بَيْتِهِ ‘ওহে যারা মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ঈমান এনেছ, অথচ এখনো অন্তঃকরণে ঈমান পৌঁছেনি! তোমরা মুসলিমদের নিন্দা কর না, তাদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। কেননা যে ব্যক্তি অপরের দোষ খোঁজে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করেন, তাকে তার নিজস্ব বাসগৃহেই অপদস্ত করেন’।[1]

মুমিন ব্যক্তির দোষ-ক্রটি তালাশ করা অন্যায় ও পাপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا ‘অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ (আহযাব ৩৩/৫৮)

অধিকাংশ মানব সমাচার

__ মুহাম্মাদ লিলবর আল-বারাদী

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনুল কারীমের মধ্যে أَكْثَرَ (আকছারা) অর্থাৎ ‘অধিকাংশ’ বা ‘বেশির ভাগ’ (Almost) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ‘অধিকাংশ’ শব্দ ব্যবহার করে তিনি মানুষকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। ‘অধিকাংশ’ সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ‘কিন্তু অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে অবগত নয়’ (ইউসুফ ১২/৬৮), ‘অধিকাংশ অবহিত নয়’ (আন‘আম ৬/৩৭), ‘কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না’ (আরাফ ৭/১৩১), অন্যত্র তিনি বলেন, وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ ‘আর তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না’ (মায়িদা ৫/১০৩), কেননা,وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ ‘তাদের অধিকাংশই মূর্খ’ (আন‘আম ৬/১১১)। বর্তমানে দুনিয়ার অবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে যে, দুনিয়াতে অধিকাংশ ব্যক্তি দুনিয়ার মরীচিকাময় মাল, মর্যাদা, নারীসহ যাবতীয় মোহ ফেৎনায় নিপতিত হয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ক্রমে ক্রমে মানুষ ঈমানের দ্বীপ্ততা ও আমলের তৃপ্তি হারিয়ে ফেলছে। তবে আল্লাহ তা‘আলা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন সেই সকল ব্যক্তি ব্যতীত। এই অধিকাংশ ব্যক্তি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

10 October, 2021

যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)

ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
(পর্ব  : ০১)

ভূমিকা :

বিংশ শতাব্দীতে যে সকল মুহাদ্দিছ ইলমে হাদীছের ময়দানে অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)। যাঁর অনন্য সাধারণ অবদানের ফলে সারা বিশ্বে ছহীহ হাদীছ অনুসরণের গুরুত্ব এবং হাদীছ যাচাই-বাছাইয়ের প্রতি আগ্রহ বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যাতে হাদীছ থেকে সরাসরি দলীল গ্রহণের পথকে আরো সুগম করেছে। বিশেষত আধুনিক যুগে হাদীছ গবেষণায় তিনি এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে ইলমে হাদীছের বহু ছাত্র এখন ইলমুত তাখরীজের ময়দানে বিচরণ করছেন এবং সেখান থেকে মণি-মুক্তা আহরণ করছেন।

ইসলামী শরী‘আতের মূল ভিত্তি হাদীছকে প্রশ্নবিদ্ধকারী জাল ও যঈফ হাদীছসমূহকে চিহ্নিত করা এবং সাথে সাথে ছহীহ হাদীছসমূহকে বাছাই করার ক্ষেত্রে শায়খ আলবানী (রহঃ) যে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন, তা যথার্থভাবে অনুধাবন করার জন্য তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা অতীব যরূরী। আলোচ্য প্রবন্ধে তাঁর জীবনের নানা দিক ও বিভাগ এবং তাঁর মৌলিক রচনাবলী ও তাহক্বীক্বকৃত গ্রন্থাবলীর উপর সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হ’ল।

23 September, 2021

স্বহস্তে উপার্জন সর্বোৎকৃষ্ট রুযী :

-- লিলবর আল-বারাদী

হালাল রুযী তারাই গ্রহণ করবে যারা মুমিন বান্দা। আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বলেন,   إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوْا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ- ‘অথচ মুমিনদের কথা তো কেবল এটাই হ’তে পারে যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয় তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দেওয়ার জন্য, তখন তারা বলবে আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর এরাই হ’ল সফলকাম’ (নূর ২৪/৫১)। 

ধনী-গরীবের মধ্যকার ব্যবধান আল্লাহ তা‘আলারই ব্যবস্থাপনা। তিনি যাকে খুশী অঢেল সম্পদ দিয়ে থাকেন। এটা মেনে নেয়া তাকদীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আর ধনাঢ্যতা ও দারিদ্রতা উভয়ই বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা।  আল্লাহ তা‘আলা যাকে যতটুকু সম্পদ দিয়েছেন, এতে সন্তুষ্ট থেকে হালাল জীবিকা গ্রহণ করা উচিৎ। এ দিকে ইঙ্গিত করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,انْظُرُوْا إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلاَ تَنْظُرُوْا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَإِنَّهُ أَجْدَرُ أَنْ لاَ تَزْدَرُوْا نِعْمَةَ اللهِ ‘তোমাদের চাইতে নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির দিকে তাকাও এবং তোমাদের চাইতে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্নদের দিকে তাকিও না। আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহকে তুচ্ছ মনে না করার জন্যে এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা’ (তিরমিযী হা/২৫১৩; ইবনু মাজাহ হা/৪১৪২, সনদ ছহীহ)।

14 September, 2021

দ্বীনী জ্ঞান ও জ্ঞানীর মর্যাদা

লিলবর আল-বারাদী

http://www.tawheederdak.com/article_details/799
জ্ঞানার্জনকারীর মর্যাদা : 
আল্লাহ তা‘আলাকে চেনার প্রথম স্তর হ’ল জ্ঞানার্জন করা। আল্লাহর নিকট থেকে যে অহির বিধান এসেছে তা হ’ল কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূল অর্থাৎ পবিত্র কুরআন মাজীদ ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ। এই দুই কিতাবের জ্ঞানকে দ্বীনী জ্ঞান বা ইলম বলা হয়। এই ইলম অর্জনকারী সম্পর্কে অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহর সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত’ (মুজাদালা ৫৮/১১)। জ্ঞানী ব্যক্তিরা কেবল আল্লাহর বিধান জেনে বুঝে তাঁকে ভয় করেন। আল্লাহর তা‘আলা বলেন, إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ‘বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহরকে ভয় করে’ (ফাতির ৩৫/২৮)

11 August, 2021

দ্বীনী জ্ঞান ও জ্ঞানীর মর্যাদা

লিলবর আল-বারাদী
 http://www.tawheederdak.com/writer_archive/18.
 সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। সুশিক্ষা ব্যতীত বৈধ পন্থায় কোন জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারেনা। শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক জাতির জন্যে বাধ্যতামূলক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আদি পিতা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টির পরে সর্বপ্রথম বিশেষ পন্থায় শিক্ষা দেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنْبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَؤُلَاءِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ. ‘অনন্তর আল্লাহ আদমকে সকল বস্ত্তর নাম শিক্ষা দিলেন। অতঃপর সেগুলিকে ফেরেশতাদের সম্মুখে পেশ করলেন এবং বললেন, তোমরা আমাকে এগুলির নাম বলে দাও, যদি তোমরা (তোমাদের কথায়) সত্যবাদী হও’ (বাক্বারাহ ২/৩১)। এই আয়াত থেকে পরিস্কারভাবে বুঝা যায়, প্রথম মানব আদি পিতা আদম (আঃ)-কে আল্লাহ সকল বস্ত্ত সম্পর্কিত জ্ঞান ও যোগ্যতা দান করেন এবং বিশ্বে আল্লাহর প্রেরিত প্রতিনিধি হিসাবে দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পরিচালনার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। সাথে সাথে সকল সৃষ্ট বস্ত্তকে করে দেন মানুষের অনুগত (লোকমান ৩১/২০) ও সবকিছুর উপরে দেন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব (ইসরা ১৭/৭০)। আর সেকারণেই জিন-ফিরিশতা সবাইকে মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আদমকে সিজদা করার আদেশ দেন। সবাই সে নির্দেশ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ইবলীস অহংকারবশে সে নির্দেশ অমান্য করায় চিরকালের মত অভিশপ্ত হয়ে যায় (বাক্বারাহ ২/৩৪)

আদম (আঃ) যখন জ্ঞানে শ্রেষ্ঠত্ব পেলেন তখন অপর জ্ঞানী ইবলীস হিংসার বর্শবতী হয়ে অহংকার করল এবং শয়তানে পরিণত হ’ল। জ্ঞানীর মর্যাদা অবিসংবাদিত, তবে ঐ সমস্ত জ্ঞানী ব্যক্তিরা নয়, যারা দম্ভভরে সত্যকে উপেক্ষা করে থাকে। ইসলামের নবজাগরণের প্রথম বাণী বা ‘অহি’ হ’ল اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ‘তুমি পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ (আলাক্ব ৯৬/১)। শিক্ষা ব্যতীত জ্ঞানী হয় না। হোক তা প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা হোক সে নিরক্ষর ব্যক্তি। তবে সার্টিফিকেট জ্ঞানীর মানদন্ড নয়। জ্ঞানীর মানদন্ড হলো আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া। আর তাক্বওয়াশীল ব্যক্তি ইহকালে যেমন শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে বরিত এবং পরকালেও তেমনি সম্মানিত। সুতরাং জ্ঞানী হতে হবে, তবে অহংকারী নয়। নিমেণ জ্ঞানীদের পরিচয় ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।

29 April, 2021

লায়লাতুল ক্বদর তালাশ করো


 একজন মুমিন সারা বছর চাতকের মত রামাযানের প্রতীক্ষায় থাকে। অন্যদিকে রামাযান মাসের শেষ দশকে আগমনে ‘লায়লাতুল ক্বদর’ তথা ক্বদরের রাত্রী তালাশে ব্যাকুল হয়ে থাকে। ক্বদরের রাত একটি মহিমান্বিত ও বরকতময় রজনী। মহান আল্লাহ তা‘আলার কৃপায় এ রাতে সাধ্যমত ইবাদত করা এবং পাপ মোচন করিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ রাত শেষে দশকের বিজোড় রাত্রীতে তালাশ করতে হয়।

১. লায়লাতুল ক্বদরের নামকরণ : 

‘ক্বদর’ (اَلْقَدْرُ) অর্থ সম্মান, মর্যাদা। আর لَيْلَةُ الْقَدْرِ অর্থ মর্যাদার রাত্রি, বা মহিমান্বিত রজনী। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ- فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ- أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ. ‘আমরা একে নাযিল করেছি বরকতময় রাত্রিতে। আর আমরা তো সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। আমাদের আদেশক্রমে। আর আমরাই তো প্রেরণকারী’ (দুখান ৪৪/৩-৫)।

২. লায়লাতুল ক্বদরের তারিখ :

 লায়লাতুল ক্বদর কোন রাতকে বলা হয়, তা নিয়ে বিদ্বানগণের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও হাদীছে তার সঠিক সমাধান রয়েছে। তবে এ রাত নির্দিষ্ট কোন তারিখ সম্বলিত নয়। 

ক. শেষ দশকে : রামাযানের শেষ দশকের কোন একদিনে ক্বদরের রাত্রি সংঘটিত হয়ে থাকে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى تَاسِعَةٍ تَبْقَى ، فِى سَابِعَةٍ تَبْقَى ، فِى خَامِسَةٍ تَبْقَى. ‘তোমরা তা লাইলাতুল ক্বদর রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করো। লাইলাতুল ক্বদর গণনায় নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে’।১  অন্যত্র, আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিক্বাফ করতেন এবং বলতেন, تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.  ‘তোমরা রামাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো’।২ 

04 March, 2021

ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে আখেরাত বিশ্বাসের ফলাফল


 -- প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

মুহতারাম আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ


عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا لِي وَلِلدُّنْيَا؟ وَمَا أَنَا وَالدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ، ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا-

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘দুনিয়ায় আমার কি? আমি ও দুনিয়া তো একজন পথিকের মত। যে একটি গাছের ছায়া তলে বসে আছে। ছায়া চলে যাবে এবং তাকে ছেড়ে যাবে’।[1] এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, দুনিয়া ও আখেরাতের তুলনা সেতুর এ প্রান্ত ও অন্য প্রান্তের ন্যায়। দুনিয়াতে মানুষ প্রতি পদে পদে সেতু পার হয়ে চলেছে। যখন যেখানেই তার মৃত্যু হবে, তখন সেখানেই সে তার জীবন সেতুর শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাবে। আর কবর হ’ল আখেরাতের প্রথম মনযিল। এখানে মুক্তি পেলে সে ক্বিয়ামতের চূড়ান্ত বিচারে মুক্তি পাবে। অতএব বুদ্ধিমান মানুষের কর্তব্য অপর প্রান্তে তথা মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছানোর আগেই যথাযথ পাথেয় সঞ্চয় করা। যার মাধ্যমে সে জান্নাতের চিরস্থায়ী ফলাফল পেয়ে ধন্য হবে।

আল্লাহ বলেন, مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘পুরুষ হৌক নারী হৌক মুমিন অবস্থায় যে সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম অপেক্ষা উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব’ (নাহল ১৬/৯৭)

07 February, 2021

নারীর তিনটি ভূমিকা (৩য় কিস্তি)

--- লিলবর আল-বারাদী
৯. সন্তানের দো‘আ পিতা-মাতার নাজাতের অসীলা :

আল্লাহর ইবাদত যেমন বান্দার উপর অপরিহার্য, পিতা-মাতার সেবাও তেমনি সন্তানের উপর অপরিহার্য। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার ও দো‘আ করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا - رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا ‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। তুমি তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভালভাবেই জানেন। যদি তোমরা সৎকর্ম পরায়ণ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল’ (ইসরা ১৭/২৩-২৫)। অন্যত্র বলেন,أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ ‘অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখ, তোমার) প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই’ (লোকমান ৩১/১৪)

09 January, 2021

চেতনার সংঘাত (সম্পাদকীয়, জানুয়ারী ২০২১)

-প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
--------------------------------------------------
 তাওহীদের সাথে শিরকের সম্পর্ক যেমন ওযূর সাথে বায়ু নিঃসরণের সম্পর্ক। তাওহীদ থাকলে শিরক থাকবেনা, শিরক থাকলে তাওহীদ থাকবেনা। দু’টির মাঝে আপোষের কোন সুযোগ নেই। তাওহীদের চেতনা হ’ল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা। আর শিরকের চেতনা হ’ল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে সৃষ্টির দাসত্ব করা। যেখানে শরীক হয় মুখ্য এবং আল্লাহ হন গৌণ। যেমন মক্কার মুশরিকরা কা‘বাগৃহ ত্বাওয়াফ করার সময় বলত, লাববাইকা লা শারীকা লাকা, ইল্লা শারীকান হুয়া লাক; তামলিকুহু ওয়া মা মালাক’ (আমি হাযির; তোমার কোন শরীক নেই, কেবল ঐ শরীক ব্যতীত যা তোমার জন্য রয়েছে। তুমি যার মালিক এবং সে যা কিছুর মালিক’) (মুসলিম হা/১১৮৫)। নিজ বংশীয় এই শরীক পূজারী কুরায়েশদের সাথেই রাসূল (ছাঃ)-এর আজীবন যুদ্ধ করতে হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর এবং ত্বাগূত থেকে বিরত হও’ (নাহল ১৬/৩৬)। ত্বাগূত অর্থ মূর্তি, শয়তান ইত্যাদি। বস্ত্ততঃ সকল শক্তি ও সকল সম্মান কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত (বাক্বারাহ ২/১৬৫; ইউনুস ১০/৬৫)। তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনি স্থায়ী ও চিরঞ্জীব। তিনিই রূযীদাতা, তিনিই পালনকর্তা, তিনি বিধানদাতা ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তিনি ব্যতীত অন্য কেউই আমাদের শর্তহীন আনুগত্য ও উপাসনা পাবার যোগ্য নয়। তিনি ব্যতীত অন্য কারু নিকটে মানুষের উন্নত মস্তক অবনত হবেনা।

02 January, 2021

যে সমস্ত ব্যাপারে গীবত করা জায়েয

গীবত করা সাধারণভাবে হারাম হলেও কিছু ক্ষেত্রে গীবত করা কোন সময় জায়েয, আবার কোন সময় ওয়াজিবও হয়ে যায়।
১। মাযলুম ব্যক্তির জন্য গীবত করা জায়েযঃ এটা কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “ কারো ব্যাপারে কোন খারাপ কথা প্রকাশ করা মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যে নির্যাতিত তাঁর কথা ভিন্ন। আর আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুই শুনেন ও সব কিছুই জানেন ”
(সুরা নিসা, আয়াত-১৪৮)

২। পরিচয় দানকারীঃ অনেক সময় কোন ব্যক্তির পরিচয় দিতে গিয়ে বাধ্য হয়ে তাঁর দোষ-গুণ মানুষের সামনে বলতে হয়। যেমন- বলা হয় অমুক অন্ধ হাফেয, অমুক খোঁড়া মানুষ। প্রয়োজনের তাকীদে পরিচয়ের জন্য কোন মানুষের এ ধরণের দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা জায়েয আছে। তবে শুধু পরিচয়ের জন্যেই এ ধরণের দোষ-ত্রুটি বলা যাবে। এ ছাড়া কোন প্রকারে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এ ভাবে বলা সম্পূর্ণ নিষেধ তথা হারাম হিসাবে গণ্য হবে। হাদীসে এসেছে, সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি একজন অন্ধ মানুষ ছিলেন। তিনি নামাযের আযান দিতেন না, যতক্ষণ না তাঁকে বলা হত, আপনি সকাল (ফজর) করে ফেলেছেন, আপনি সকাল (ফজর) করে ফেলেছেন। (সহীহুল বুখারী হা/ ৬১৭)
মুসলিম শরীফে এসেছে, “নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দুইজন মুয়াজ্জিন ছিল। একজন বিলাল (রাঃ) আর একজন অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)” (সহীহ মুসলিম হা/৩৮)। অত্র হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-কে কেবলমাত্র পরিচিতির জন্যেই অন্ধ বলা হয়েছে।

08 December, 2020

নারীর তিনটি ভূমিকা (০২)


--- লিলবর আল-বারাদী 

ইসলামে কন্যা সন্তানের মর্যাদা :

প্রাক-ইসলামী যুগে আরবে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে অসম্মানের মনে করা হতো এবং অকল্যাণ মনে করে জীবিত প্রোথিত করা হতো। অথচ ইসলাম এসে দুনিয়ার বুকে অবহেলিত নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করলেন। কন্যা সন্তান জাহান্নামের অন্তরাল এবং জান্নাতে যাওয়ার অসীলা বা মাধ্যম। অথচ পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে এমন মর্যাদার কথা ইসলাম বলা হয়নি।

19 October, 2020

নারীর তিনটি ভূমিকা (পর্ব : ০১)


 দুনিয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা পুরুষ ও নারী জাতিকে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেছেন। আবার নারী জাতির মধ্যে সাধারণত তিনটি ভূমিকা বিরাজমান। যথা- কন্যা, স্ত্রী ও মা। একজন সুশিক্ষিতা কন্যা সন্তান থেকে যেমন আদর্শবতী ও গুণবতী স্ত্রী হয়, তেমনি সময়ের প্রেক্ষাপটে সে মায়ের ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়। ইসলাম নারী জাতির এই তিনটি ভূমিকাকে অতীব গুরুত্বের সাথে দেখেছে। ইসলামী সমাজে নারী জাতি বলতে কন্যা, বোন, স্ত্রী, মা, খালা, ফুফু, দাসী ইত্যাদি বুঝায়। কিন্তু মৌলিকভাবে তারা তিনটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আর এই তিন ভূমিকাকে আলাদাভাবে ইসলামে সম্মানিত করা হয়েছে। ‘একজন নারী যখন কন্যা সন্তান, তখন সে পিতা-মাতার জন্য জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ’।[1] ‘নারী যখন আদর্শবতী স্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করে, তখন সে তার স্বামীর অর্ধেক দ্বীন পূর্ণকারী’।[2] ‘আবার ঐ নারী যখন আদশবর্তী মায়ের ভূমিকাতে, তখন তার পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত থাকে’।[3] সার্বিক বিবেচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ১৪০০ বছর পূর্বে এই তিন ভূমিকাতে নারীদের সম্মান, প্রতিপত্তি এবং প্রগতিশীল সম্মাননা একমাত্র ইসলামই দিয়েছে। নিম্নে তার বিবরণ উপস্থাপন করা হ’ল।

13 April, 2020

করোনা ভাইরাস ও মহামারী সম্পর্কে ইসলামী বিধি-বিধান

 --- লিলবর আল-বারাদী

ভুমিকা : 
মুমিন ব্যক্তির জন্য করোনা ভাইরাস ঈমানী পরীক্ষা স্বরূপ। যার যেমন মজবুত ঈমান, ঠিক তার তেমন কঠিন পরীক্ষা। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ছবরকারীদেরকে। যখন তারা বিপদে পতিত হয় তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী’ (বাক্বারাহ ২/১৫৩-১৫৬)। তবে যে কোন মুছিবতে ভীতু না হয়ে ছবর করা সর্বোত্তম যুক্তিযুক্ত। আর মুসলিম বান্দার কোন ভয় থাকে না। এই মর্মে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলিম বান্দার কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা নেই। এমনকি কোন কাঁটা বিধলেও (যদি সে ধর্য্য ধারন করে এবং আল্লাহর উপরে খুশি থাকে) তাহ’লে তার কারণে আল্লাহ তার গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেন’। (বুখারী হা/৫৬৪১; মিশকাত হা/১৫৩৭) অতএব ভয় নয়, জানুন, বুঝুন, সতর্ক থাকুন ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করবেন।

জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনের সুফল (শেষ পর্ব)

১২. ফেৎনা ও অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকা :  ফেৎনা ও অকল্যাণ কোন মানুষের কাম্য নয়। কিন্তু আমরা নিজেরাই অকল্যাণ ও মন্দ কামনা করি। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَالٍ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর আল্লাহ যখন কোন জাতির প্রতি মন্দ কিছু ইচ্ছা করেন, তখন তাকে রদ করার কেউ নেই। আর আল্লাহ ব্যতীত তাদের কোন অভিভাবক নেই’ (রা‘দ ১৩/১১)

14 November, 2019

❤ কুরআন মাজীদ হতে ১০০টি নির্দেশনা ❤

--- লিলবর আল-বারাদী

০১. কথাবার্তায় কর্কশ হবেন না। (০৩ঃ১৫৯)
০২. রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন (০৩ঃ১৩৪)।
০৩. অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। (০৪ঃ ৩৬)
০৪. অহংকার করবেন না। (০৭ঃ ১৩)
০৫. অন্যকে তার ভুলের জন্য ক্ষমা করুন (০৭ঃ ১৯৯)
০৬. লোকদের সাথে ধীরস্থির হয়ে শান্তভাবে কথা বলুন। (২০ঃ ৪৪)
০৭. উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। (৩১ঃ ১৯)
০৮. অন্যকে উপহাস করবেন না (৪৯ঃ ১১)
০৯. পিতামাতার প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করুন। (১৭ঃ ২৩)
১০. পিতামাতার প্রতি অসম্মানজনক শব্দ উচ্চারণ করবেন না। (১৭ঃ ২৩)
১১. অনুমতি না নিয়ে পিতামাতার শোবার ঘরে প্রবেশ করবেন না। (২৪ঃ ৫৮)
১২. ঋণ গ্রহণ করলে তা লিখে রাখুন। (০২ঃ ২৮২)
১৩. কাউকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবেন না। (০২ঃ ১৭০)
১৪. ঋণ গ্রহণকারীর কঠিন পরিস্থিতিতে পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দিন। (২ঃ ২৮০)
১৫. কখনো সুদের সাথে জড়িত হবেন না। (০২ঃ ২৭৫)
১৬. কখনো ঘুষের সাথে জড়িতে হবেন না। (০২ঃ১৮৮)
১৭. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন না। (০২.১৭৭)
১৮. আস্থা রাখুন (০২ঃ ২৮৩)
১৯. সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করবেন না। (২:৪২)
২০. ইনসাফের সাথে বিচার করবেন। (০৪ঃ ৫৮)

জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনের সুফল (২য় কিস্তি)

---লিলবর আল-বারাদী


৪. ইসলামী পরিবার গঠনে অনুপ্রাণিত হওয়া : পারিবারিক জীবন ব্যাতিরেকে মানব সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। মানুষের অস্তিত্বের জন্য পারিবারিক জীবন অপরিহার্য। সমাজের শান্তি-শৃংঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, উন্নতি-অগ্রগতি ইত্যাদি সুষ্ঠু পারিবারিক ব্যবস্থার উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল। পারিবারিক জীবন অশান্ত ও নড়বড়ে হ’লে, তাতে ভাঙ্গন ও বিপর্যয় দেখা দিলে সমাজ জীবনে নানা অশান্তি ও বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি হ’তে বাধ্য। তাই বলা হয়, পরিবার মানব সমাজের মূল ভিত্তি।

13 October, 2019

জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনের সুফল (প্রথম কিস্তি)

--- লিলবর আল-বারাদী

ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজ ও সামাজিকতার বলয়ে বসবাসে মানুষ অভ্যস্ত। ফলে জামা‘আতী যিন্দেগীর বাস্তব ও অকৃত্রিম বন্ধনে পরস্পর পরস্পরে জড়িয়ে রয়েছে। জামা‘আতের শাব্দিক উৎস সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, الْجَمَاعَةُ هِيَ الِاجْتِمَاعُ وَضِدُّهَا الْفُرْقَةُ؛ وَإِنْ كَانَ لَفْظُ الْجَمَاعَةِ قَدْ صَارَ اسْمًا لِنَفْسِ الْقَوْمِ الْمُجْتَمِعِينَ ‘জামা‘আত হ’ল সমাজবদ্ধতা। এর বিপরীত হ’ল বিচ্ছিন্নতা। যদিও জামা‘আত শব্দটি স্বয়ং ঐক্যবদ্ধ জাতির নামে পরিণত হয়েছে’।[1] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, وَتَفْسِيرُ الْجَمَاعَةِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ هُمْ أَهْلُ الْفِقْهِ وَالْعِلْمِ وَالْحَدِيثِ ‘বিদ্বানগণের নিকটে জামা‘আতের ব্যাখ্যা হ’ল তারা হ’লেন আহলুল ফিক্হ, আহলুল ইলম ও আহলুল হাদীছ’।[2]
জামা‘আত হ’ল বিশেষত ছাহাবায়ে কেরাম। এ কথার ভিত্তিতে জামা‘আত শব্দটি অন্য একটি বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যশীল। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِى  ‘জামা‘আত হ’ল আমি এবং আমার ছাহাবীগণ যার উপরে রয়েছি’।[3] খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে রাসূল (ছাঃ) বর্ণিত ‘আল-জামা‘আত’ অর্থ কি- একথা জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, اَلْجَمَاعَةُ مَا وَافَقَ الْحَقَّ وَإِنْ كُنْتَ وَحْدَكَ ‘হক-এর অনুগামী দলই জামা‘আত, যদিও তুমি একাকী হও’।[4]

19 March, 2019

তিনটি প্রশ্নের জবাব

-- লিলবর আল-বারাদী

ভূমিকা : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আর এই সেরা হবার পেছনে যার অবদান তা হলো বিবেক। যার বিবেক নেই, সে মানব সমাজে মানুষের মত চলাফেরা করলেও প্রকৃতপক্ষে সে মানুষ নয়। তাই মানুষ মাত্রই হবে বিবেক সম্পন্ন। কারো বিবেক থাকে জাগ্রত, আবার কারো হয় মৃত। সেই জন্যে মনীষীরা বলেন, ‘বিবেক যেখানে উপস্থিত, সুখ সেখানে তিরোহিত’। ‘সুখ যেখানে উপস্থিত, বিবেক সেখানে তিরোহিত’। আর বিবেক আছে বলেই মানব মনে নানা ধরনের প্রশ্নের অবতারণা হবে এটাই স্বাভাবিক। অনুরূপভাবে আমাদের তিনটি প্রশ্নের জবাব জেনে রাখা অতিব জরুরী। প্রশ্নগুলো হলো- ১. আমরা কে? ২. আমাদের দায়িত্ব কী? ৩. কেন আমরা দায়িত্ব পালন করব?

21 January, 2019

ষড় রিপু সমাচার : মোহ রিপু


--লিলবর আল-বারাদী
চার. মোহ রিপু :
মোহ শব্দটি চিত্তের অন্ধতা, অজ্ঞানতা, অবিদ্যা, মূর্খতা, মূঢ়তা, নির্বুদ্ধিতা, ভ্রান্তি, মুগ্ধতা, বিবেকহীনতা, মায়া, মূর্ছা, বুদ্ধিভ্রংশ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আসলে মানব রিপুর মধ্যে এটি অন্যতম একটি রিপু। কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ ও মাৎসর্য এ সবকটির উপর মোহ প্রভাব খাঁটিয়ে থাকে। অর্থাৎ মোহ দোষে দূষিত ব্যক্তি বাঁকি পাঁচটি রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাকে যে কোন রিপু অতি সহজেই গ্রাস করতে পারে। কারণ অজ্ঞতা বা নির্বুদ্ধিতা থেকেই বিবেকশূন্যতার সৃষ্টি হতে পারে। মায়া হলো মোহ রিপুর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
অতিমায়া বা দয়া ক্ষেত্র বিশেষে এতই ক্ষতিকর যে তা আর পুষিয়ে নেয়ার কোন উপায় থাকে না। যেমন- জীব হত্যা মহাপাপ কথাটি ভুল অর্থে জেনে কোন বিষধর সাপকে যদি কেউ মায়া করে ছেড়ে দেয় তাহলে সে সাপটি সুযোগ পেলে তাকে কামড় দিয়ে হত্যা করতে দ্বিধান্বিত হবে না। কাজেই মোহ বা মায়া সর্বত্রই গ্রহণযোগ্যতা পায় না। একজন অধার্মিক বা মুর্খকে তার গুরুতর কোন অপরাধের পর নিঃশর্ত বা শুধু শুধুই ছেড়ে দিলে সে তার মূল্য রক্ষা করে না বা করতে পারে না। কারণ সে মুর্খ বা মোহাবিষ্ট। সে তার নিজের সর্ম্পকে, সমাজ, পরিবেশ, প্রতিবেশ সর্ম্পকে না ওয়াকিফহাল। জীবনের প্রতিপাদ্য, জীবনবেধ, জগতবেধ ইত্যাদি বিষয়ে তার বোধশক্তি ক্ষীণ তাই মোহ তাকে সহজেই আবেষ্টন করে রাখে।

22 December, 2018

মদের মত হোমিও ওষুধ কী হারাম (?)



লিলবর আল-বারাদী 
ইসলাম সকল প্রকার মাদক তথা নেশাদার দ্রব্য হারাম ঘোষণা করেছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনكُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَ كُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ  প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্যই মদ আর যাবতীয় মদই হারাম [মুসলিমমিশকাত হা/৩৬৩৮] অথচ এই মাদকের ভয়ংকর থাবায় আজ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন মানব সভ্যতা এর সর্বনাশা মরণ ছোবলে জাতি আজ অকালে ধ্বংস হয়ে যচ্ছে ভেঙ্গে পড়ছে অসংখ্য পরিবার বিঘ্নিত হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে চোরাচালানসহ মানবতা বিধ্বংসী অসংখ্য অপরাধ মাদকাসক্তির কারণে সকল জনপদেই চুরিডাকাতিছিনতাইচাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বেড়ে গিয়ে মানুষের জান-মাল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে সমাজের অধিকাংশ অপরাধের জন্য মুখ্যভাবে দায়ী এই মাদকতা এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেনلاَتَشْرَبِ الْخَمْرَ، فَإِنَّهُ مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ. মদ পান করো না কেননা তা সকল অপকর্মের চাবিকাঠি[ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭১হাদীছ ছহীহ] অন্য হাদীছে এসেছেاِجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا أُمُّ الْخَبَائِثِ. তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক কেননা তা অশ্লীল কাজের মূল[নাসাঈ হা/৫৬৬৭হাদীছ ছহীহ]

আভিধানিক অর্থ : মাদকদ্রব্যের আরবী প্রতিশব্দ খমর (خمر) এর অর্থ- সমাচ্ছন্ন করাঢেকে দেয়া এই সকল অর্থের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণেই মদ ও শরাবকে খমর বলা হয় 
Cambridge Dictionary-
তে বলা হয়েছে, An alcoholic drink which is usually made from grapes but can also be made from other fruits or flowers. It is made by FERMENTING, the fruit with water and sugar. 
মদ হল নেশাকর পানীয় যা সাধারণত আঙ্গুর থেকে তৈরী হয় তবে অন্যান্য ফল ও ফুল থেকেও তৈরী হতে পারে এটা উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য চিনি ও পানির মাধ্যমে ফল দ্বারা তৈরী হয় 

পারিভাষিক অর্থ : যে সকল বস্ত্ত সেবনে মাদকতা সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে তাকে মাদকদ্রব্য বলে কবি বলেনشَرِبْتُ الْخَمْرَ حَتَّى ضَلَّ عَقْلِىْ + كَذَاكَ الْخَمْرُ تَفْعَلُ بِالْعُقُوْلِ. মদ পান করে আমার বিবেক হারিয়ে গেছে মদ এভাবেই বুদ্ধিকে নিয়ে খেল-তামাশা করে সাধারণত নেশা জাতীয় দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করা বা পান করাই মাদকাসক্তি 
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী : وَ الْخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ মদ বা মাদকদ্রব্য তাইযা জ্ঞান-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে[বুখারীমিশকাত হা/৩৬৩৫ হুদূদ’ অধ্যায়] 

20 November, 2018

দরসে কুরআন : মুত্তাক্বীর পরিচয়

- মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

 الٰم- ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِلْمُتَّقِيْنَ- الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلاَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ- وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ- أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ-
১. আলিফ লাম মীম। (এর অর্থ কেবলমাত্র আল্লাহ অবগত)। ২. এই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। যা আল্লাহভীরুদের জন্য পথ প্রদর্শক। ৩. যারা গায়েবে বিশ্বাস করে ও ছালাত কায়েম করে এবং আমরা তাদেরকে যে রূযী দান করেছি, তা থেকে ব্যয় করে। ৪. যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ঐ বিষয়ে, যা আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্ববর্তীগণের প্রতি নাযিল করা হয়েছিল। আর পরকালীন জীবনের প্রতি যারা নিশ্চিত বিশ্বাস পোষণ করে। ৫. ঐসকল মানুষ তাদের প্রভুর দেখানো পথের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই সফলকাম।
বর্ণিত আয়াতগুলিতে মুত্তাক্বীদের ৬টি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে আয়াতগুলির তাফসীরসহ উক্ত গুণগুলির ব্যাখ্যা প্রদত্ত হ’ল-

12 November, 2018

ষড় রিপু সমাচার : লোভ রিপু


- লিলবর আল-বারাদী

লোভ হলো লিপ্সা বা কাম্য বস্তু লাভের প্রবল ইচ্ছা। বিনা লোভে কোন কাজও হয়না আবার লোভ নেই এমন মানুষও নেই। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যত কাজকর্ম রয়েছে তার প্রতিটির পেছনে নিহীত রয়েছে লোভ। বিনা লোভে পৃথিবীতে কিছুই হয় না। লোভ আছে বলেই মানুষের বেঁচে থাকার স্পৃহা আছে, জাগতিক ও পারলৌকিক আশা-আকাংখা তথা অভিপ্রেত অনুভূতি আছে।
তবে লোভের রকমফের রয়েছে। কথায় বলে-অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। আসলে অতি লোভের পরিণাম হিসেবে আসে পাপ এবং পাপের পরিণতি মৃত্যু। পৃথিবীতে মানুষ যে লোমহর্ষক কর্মকান্ড করছে তার মূলে রয়েছে অতি লোভ। লোভ যদি কোন মানুষকে পাইয়ে বসে তখন তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।
লোভকে বাস্তবায়ন বা চরিতার্থ করার জন্য মানুষ যে কোন অসৎ উপায় অবলম্বন করতে পারে। অতি লোভ মানুষকে পাপের সমুদ্রে অবগাহন করিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বিশেষ করে নারীর লোভ, অর্থ সম্পদের লোভ, সুনাম অর্জনের লোভ ও নেতৃত্ব লাভের লোভই মানুষের জীবনকে চরম ও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। তখনই লোভ মানব জীবনের বড় রিপু বলে বিবেচিত হয়। আর তাইতো লোকে বলে- ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’।
মানুষ যখন লোভের বশীভূত হয়ে পড়ে তখন তার মানবতা, বিবেক, সুবুদ্ধি লোপ পায়। সে স্বপনচারী হয়ে কল্পনার বিশাল রাজ্যের রাজা হয়ে লোভান্ধ হয়। তখনই সে লোভের কলংকিত কালিমায় নিক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং সমূহ বিপদ ও ভয়াল সর্বনাশ তাকে ঘিরে ফেলে। কিন্তু এ লোভকে সংবরণ করে, সংযম করে বা নিয়ন্ত্রণ করে হিতাহিত বোধকে জাগ্রত করে তার জীবন ও জগতের কল্যাণ বিবেচনা করে কাজ চালাতে পারলে সে লোভ তাকে নিতান্ত সুখ স্বর্গে নিক্ষেপ করে। নিয়ন্ত্রিত লোভ পৃথিবীকে সাজিয়ে দিতে পারে অনাবিল আরাম আর কল্যাণময় উন্নতির পুষ্প বাগানে।

09 November, 2018

পবিত্রতা অর্জনে : ওযূ

-  লিলবর আল-বারাদী

ভূমিকা :
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হিসাবে পবিত্রতা অর্জন করা অপরিহার্য। পবিত্রতা ছাড়া ইবাদত হয় না, এমন একটি ইবাদত হলো ছালাত। ছালাতে দাঁড়ানোর পূর্বেই ওযূর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ‘তোমার পোষাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ’ (মুদ্দাছছির ৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ  ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী ও অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/২২২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ ‘পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কারো ছালাত কবুল হয় না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা কবুল হয় না’ 1। আর মুসলমান সর্বদা পবিত্র এবং মুশরিকগণ অপবিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ ‘হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক বা অপবিত্র’ (তওবা ২৮)।
পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হলো- ওযূ, গোসল ও তায়াম্মুম। সোনামণিদের এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে শিক্ষা নিতে হবে। তাদের জেনে রাখা অতিব যরুরী ভেবে নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হলো-

23 September, 2018

ষড় রিপু সমাচার : ক্রোধ রিপু

লিলবর আল-বারাদী

ক্রোধ মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য ষড়রিপুর অন্যতম। ক্রোধ শব্দের প্রতিশব্দ হলো রাগ বা রোষ। কেবল মানুষই নয় প্রাণী মাত্রই ক্রোধ আছে। ক্রোধ শক্তি একজন মানুষকে অন্যজন থেকে আলাদা হতে সহায়তা করে। তবে ক্রোধের রয়েছে বহুবিধ চেহারা ও প্রকৃতি। ‘কুল লক্ষণ' বলে একটি কথা আছে। কুল লক্ষণ অর্থাৎ সৎকুলের ন’টি গুণ রয়েছে। গুণগুলো হলো-আচার, বিনয়, বিদ্যা, প্রতিষ্ঠা, তীর্থদর্শন, নিষ্ঠা, আবৃত্তি, তপস্যা ও দান। আসলে ক্রোধান্ধ একজন মানুষের পক্ষে বোধকরি উপরে বর্ণিত ন’টি গুণের একটিতেও সফল হওয়া সম্ভব নয়। কারও মধ্যে এ গুণগুলো অনুপস্থিত থাকলে প্রকৃত প্রস্তাবেই সে আসল মানুষ হতে পারে না। ক্রোধান্ধ মানুষের বিবেক বুদ্ধি থাকলেও তা সে কাজে লাগাতে ব্যর্থ। কিন্তু ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তার মধ্যে শিষ্টাচার, ভদ্রতা, বিদ্যা, আত্মপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হতে পারে। তবে কথায় বলে-‘রাগ আছে যার বাগ আছে তার’। আসলে কথাটি বিশেষভাবে অর্থবহ। কারণ মানুষের রাগ থাকাটাই স্বাভাবিক বা স্বভাবজাত বিষয়। তাই মানুষকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও রাখতে হবে। এ রাগ রাগান্ধ রাগ নয়। রাগান্ধ রাগ বা ক্রোধ মানব জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও কল্যাণে অপতিদ্বনিদ্ব শত্রু বলে বিবেচিত হয়।

31 July, 2018

ষড় রিপু সমাচার : কাম রিপু


লিলবর আল-বারাদী

ভূমিকা :
মানব জীবন বড়ই বন্ধুর। জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাত জীবনকে প্রতিনিয়ত যেমনি শোধরিয়ে দেয় তেমনি আবার কলুষিতও করে থাকে। পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রাণীর মধ্যে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ। এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পেছনে যে বিষয়গুলো সদা ক্রিয়াশীল তা হলো তার বিবেক, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। বিবেক হলো মানুষের অন্তর্নিহীত শক্তি যার দ্বারা ন্যায়, অন্যায়, ভালোমন্দ, ধর্মাধর্ম বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অর্জিত হয়। বুদ্ধি হলো তার ধীশক্তি বা বোধশক্তি যার দ্বারা জীবন ও জগতে সংগঠিত যাবতীয় ক্রিয়াকলাপে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার বিজ্ঞানময় দক্ষতা নির্ণীত হয়। বিচক্ষণতা হলো তার দূরদর্শীতা যার মাধ্যমে মানুষ জীবনে আগত ও অনাগত বিষয়ে পা-িত্য প্রদর্শন করে নিজেকে সর্বত্র সাবলীল ও সফল করে তুলতে সক্ষম হয়। আর নিয়ন্ত্রণ হলো সংযমন যার দ্বারা মানুষ তার জীবনের সর্বত্র সংযত ও শৃংখলিত জীবনবেদ অনুধাবনে সক্ষম হয়। সুন্দর ও আদর্শ জীবন গঠনের উল্লেখিত সূচকগুলো যার কারণে প্রায়শ বাধাগ্রস্থ ও প্রতিহত হয় তা হলো ‘ষড়রিপু’।

30 May, 2018

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে ছিয়াম সাধনা

--- লিলবর আল-বারাদী
 পূর্বাভাষঃ

‘ছাওম’ আরবী শব্দ। এর অর্থ- বিরত থাকা, সংযম, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। মানব জাতির প্রতি আল্লাহ তা’আলার আদেশ সমূহের মধ্যে ‘ছিয়াম’ অন্যতম। ছিয়াম একটি আধ্যাত্মিক ইবাদত। সিয়ামের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব হচ্ছে মানুষকে মুত্তাক্বী বা আল্লাহভীরু করা। হিজরী দ্বিতীয় সনে সিয়াম ফরয হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ [٢:١٨٣]

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার’[1]।

ছিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে, তার বিগত সকল গুনাহ (সগীরা) মাফ করে দেওয়া হয়’[2]।

আমরা অনেকেই মনে করি, ছিয়াম সাধনার ফলে গুনাহ মাফ হয় ঠিকই, কিন্তু শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য তা ভীষণ ক্ষতিকর। সারা মাস ছিয়াম পালনের ফলে শরীর-স্বাস্থ্যের পুষ্টি সাধনে বাধাপ্রাপ্ত হয় ইত্যাদি। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে চির শাশ্বত তথ্যের সত্যতা বেরিয়ে এসেছে যে, ছিয়াম শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়; বরং অত্যন্ত উপকারী এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। ছিয়াম নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করেছেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডাঃ হেপোক্রেটিস বহু শতাব্দী পূর্বে বলেছেন, The more you nourish a diseased body the worse you make it. অর্থাৎ ‘অসুস্থ দেহে যতই খাবার দিবে, ততই রোগ বাড়তে থাকবে’। সমস্ত দেহে সারা বছরে যে জৈব বিষ (Toxin) জমা হয়, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার ফলে সে জৈব বিষ দূরীভূত হয়। তাছাড়া মানুষের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর সিয়াম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। নিম্নে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে সিয়ামের গুরুত্ব আলোচনা করা হ’ল-

24 May, 2018

তাক্বদীরে বিশ্বাস

--- ড. মুহাম্মাদ আবু তাহের

উপক্রমনিকা :
ঈমানের অন্যতম রুকন হচ্ছে তাক্বদীরে বিশ্বাস। জগত সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টিকুলের ভাগ্য নির্ধারণ করে স্বীয় দফতর লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এ বিশ্বাসই তাক্বদীরে বিশ্বাস। এর বিপরীত বিশ্বাস বা ধারণা করা হ’ল ঈমান বিরোধী। বক্ষমান প্রবন্ধে তাক্বদীরে বিশ্বাসের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হ’ল।-

তাক্বদীরের পরিচয় :
‘তাক্বদীর’ শব্দের অর্থ নির্ধারণ করা বা নির্দিষ্ট করা। শারঈ পরিভাষায় তাক্বদীর হ’ল আল্লাহ কর্তৃক বান্দার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল বিষয় নির্ধারণ করা।
আল্লামা সা‘দ বলেন,هُوَ تَحْدِيْدُ كُلِّ مَخْلُوْقٍ بِحَدِّهِ الَّذِيْ يُوجَدُ عَلَيْهِ مِنْ حُسْنٍ وَقُبْحٍ وَنَفْعٍ وَضَرٍّ وَمَا يَحْوِيهِ مِنْ زَمَانٍ وَمَا يَتَرَتَّبُ عَلَيْهِ مِنْ ثَوَابٍ وَعِقَابٍ- ‘সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তথা ভাল-মন্দ, উপকার-অপকার, ইত্যাদি স্থান-কাল এবং এ সবের শুভ ও অশুভ, ইষ্ট-অনিষ্ট, পরিণাম পূর্ব এবং ছওয়াব ও আযাব হ’তে নির্ধারিত হওয়া’।[1]
মূলতঃ তাক্বদীর বলতে জগতের যাবতীয় বস্তু তথা মানুষ ও জিনসহ যত সৃষ্টি রয়েছে সবকিছুর উৎপত্তি ও বিনাশ, ভাল ও মন্দ, উপকার ও অপকার ইত্যাদি কখন কোথায় ঘটবে এবং এর পরিণাম কি হবে প্রভৃতি মাখলূক সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারণ করে রেখেছেন। জগতে যা কিছু ঘটছে এবং ঘটবে সবই তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ আছে। এর বাইরে কিছুই নেই। ছাহাবীগণ এভাবেই তাক্বদীর-এর পরিচয় তুলে ধরেছেন। ত্বাউস বলেন,أَدْرَكْتُ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُوْنَ كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ- ‘আমি বহু ছাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম, তাঁরা বলতেন, প্রত্যেক জিনিসই তাক্বদীর অনুসারে সংঘটিত হয়’।[2] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزُ وَالْكَيْسُ أَوِ الْكَيْسُ وَالْعَجْزُ ‘প্রত্যেক জিনিসই তাক্বদীর অনুসারে সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা’।[3]

18 May, 2018

পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

-মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا- وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا- رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا- (إسراء 23-25)-
‌‌‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। তুমি তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল’। ‘আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন’। ‘তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভালভাবেই জানেন। যদি তোমরা সৎকর্ম পরায়ণ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল’ (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/২৩-২৫)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ স্বীয় ইবাদতের সাথে পিতা-মাতার সেবাকে একত্রিতভাবে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে এটিকে তাওহীদ বিশ্বাসের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ বুঝানো হয়েছে। এর কারণ সৃষ্টিকর্তা হিসাবে যেমন আল্লাহর কোন শরীক নেই, জন্মদাতা হিসাবে তেমনি পিতা-মাতারও কোন শরীক নেই। আল্লাহর ইবাদত যেমন বান্দার উপর অপরিহার্য, পিতা-মাতার সেবাও তেমনি সন্তানের উপর অপরিহার্য। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ ‘অতএব তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখ, তোমার) প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই’ (লোকমান ৩১/১৪)। এখানেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাকে সমভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।