• আমাদের দাওয়াত : সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর। আসুন! পবিত্র কুর‘আন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি।

29 June, 2015

সিজদাহ্



সিজদাহ্ হচ্ছে সালাতের শ্রেষ্ঠ অংশএই শব্দটা কোরানে এসেছে মোট ৯২ বার এবং উল্লেখ আছে পবিত্র কোরানের ৩২টি পৃথক সূরায়, একটি পৃথক অধ্যায় আছে, ৩২ অধ্যায়, যেটার নাম সূরা সাজদামাটিতে উপুড় হওয়া এটা সালাতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান রুকন সিজদাহ
আল্লাহ বলেন ঃ
تفلحون لعلكم وافعلوااخير واربكم واواعبد امنوااركعواواسجد ين الذ يها يا
হে ইমানদারগণ! তোমরা রুকু ও সিজদাহ কর এবং আল্লাহর ইবাদত কর ও সৎকর্ম করযাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা হজ্জ-আয়াত-৭৭)
واقترب واسجد كلاتطعه
কখনই না, তুমি ওর অনুসরণ করো নাতুমি সিজদাহ করো ও আমার নিকটবর্তী হও
(সূরা আলাক-১৯)
হাদীস বলছে, ‘বান্দা স্বীয় প্রভূর সর্বাধিক নিকটে পৌছে যায় যখন সে সিজদাহ রত হয়
(মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪)
রুকু হতে উঠে ক্বওমার দোয়া শেষ করে বিনয়ের সাথে আল্লাহু আকবরবলে সিজদায় যেতে হবে। (বুখারী, মুসলিম,মিশকাত হা/৭৯৯)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল(ছাঃ)এরশাদ করেছেন, তোমরা সিজদাহ করার সময় উটের ন্যায় বসবে না এবং সিজদায় যেতে হাটুর পূর্বে হাত দুটিকে মাটিতে রাখবে। (সহীহ আবু দাউদ হা/৮৪০, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৯৯)
হাটু পূর্বে রাখা যাবে। (আবু দাউদ হাদীস -৮৩৮, ইরওয়াউল হা/৩৫৭)
অনেক আলেম হাদীসটিকে হাসান বলেছেনহাসান হলে আমলযোগ্যতবে ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারেমী বলেছেন হাদীসটি যঈফ (যা আমলযোগ্য নয়)
সাতটি অঙ্গ দ্বারা সিজদাহ করতে হয়, যা মাটিতে লেগে থাকবে তা হলোঃ নাক সহ কপাল, দুই হাতের চেটো, দুই হাটু, দুই পায়ের আঙ্গুল সমূহের অগ্রভাগ এই সাতটি অঙ্গ
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৭)
পায়ের আঙ্গুল গুলোকে কিবলামুখী করতে হবে। (বুখারী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৯০৫)
পায়ের পাতা দুটিকে মিলিতভাবে খাড়া করে রাখতে হবে
(মুসলিম হা/৪৮৬, আবু দাউদ হা/৮৭৯, নাসাঈ হা/১৬৯)
করতল ও আঙ্গুল গুলিকে বিছিয়ে রাখতে হবে।(আবু দাউদ, হাকেম, সিফাতু সালাতিন্নবী পৃঃ১৪১)
আঙ্গুল গুলিকে ফাঁক করে না রেখে স্বাভাবিক ভাবে মাটির উপর রাখতে হবে
(বায়হাক্বী, ইবনে খুযায়মা পৃঃ ১৪১)
সিজদার সময় হাত দুখানা ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে
(মুওয়াত্বা, মিশকাত হা/৯০৫, সিজদাহর ফযিলত অধ্যায়)
হাত দুটিকে মাথার দুপাশে কান অথবা কাঁধ বরাবর সোজা মাটিতে রাখতে হবে
(আবু দাউদ,তিরমিযী, নাসাঈ, ইরওয়াল গালীল হা/৩০৯; বুখারী, মিশকাত হা/৭৯২ অনুচ্ছেদ-১০, হা/৮৮৮ অনুচ্ছেদ-১৪)
এ ব্যপারে হানাফী মাযহাবের নামে মত প্রকাশ করতে যেয়ে উভয় হাত মাটিতে রাখবে আর মুখমন্ডল দুই হাতের তালুর মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপন করবে এবং উভয় হাত কান বরাবর রাখবেকেননা রাসূল (ছাঃ) এরুপ করেছেন। (আল হেদায়া প্রথম খন্ড পৃঃ ৮৩)
কনুইকে মাটি ও পাঁজর বা পেট হতে দুরে খাড়া রাখতে হবে
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৯,৮৯১)
মাটিতে কনুই হতে কব্জি পর্যন্ত (কুকুরের মত মাটিতে বিছিয়ে বসা) বিছিয়ে বসা যাবে না
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৮)
পেটের সাথে কনুই লাগিয়ে রাখা যাবে নাজড়সড় না হয়ে পিঠকে সোজা রাখতে হবে নিচের দিকে বাঁকিয়ে বা উপরের দিকে উঠিয়ে কুঁজো করে রাখা যাবে নাএবং উরুর স্পর্শ হতে পেটকে দুরে রাখতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৮, ইবনে বায পৃঃ৭)
সিজদাহ এমন লম্বা হবে, যাতে বুকের নিচ দিয়ে একটা বকরীর বাঁচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে। (মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৮৯০)
সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন, রাসূল(ছাঃ) বলেছেন ঃ যখন মুসলমান সালাত আরম্ভ করে তার গুনাহ সমূহ মাথার উপর থাকে, যতবার সে সিজদাহ করে ততবার গুনাহ ঝরে পড়েঅতঃপর যখন সে সালাত শেষ করে তখন তার সব গুনাহ ঝরে যায়
(সিলসিলা সহীহা হা/৫৭৯)
সিজদার দোয়াসমূহ ঃ
সিজদায় গিয়ে দোয়া পড়তে হবেঃসুবাহা-না রাব্বিয়াল আলাঅথবা অন্য উক্ত সময়ে পড়বার জন্য হাদীসে উল্লেখ আছে তা বলা।(নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমীযি, মিশকাত হা/৮৮১)
অতঃপর আল্লাহু আকবরবলে ধীরে সিজদাহ থেকে মাথা তুলতে হবেবাম পাতা বিছিয়ে তার তলদেশের উপর বাঁ পাছা রেখে বসতে হবে
(মুসলিম, আবু দাউদ, ইরওয়াউল গালীল হা/৩১৬)
ডান পায়ের পাতা খাড়া ও আঙ্গুল গুলিকে ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে
(বুখারী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৭৯২,৮০১)
এমনভাবে সোজা হয়ে বসতে হবে যাতে প্রত্যেক অস্থি তার নিজ জোড়ে স্থীর হয়ে যায়
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯০,৭৯১, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৮০১)
দুই সিজদাহর মাঝে যে দোআ পড়তে হবেঃ
রাসূল (ছাঃ)দুই সিজদাহর মাঝে এত দীর্ঘ সময় বসতেন যে কেউ কেউ মনে করত তিনি মনে হয় পরবর্তী সিজদাহর কথা ভুলে গেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮২ পৃষ্ঠা)
এবং এই সময় যে সকল দোয়া পড়তে হয় তাহলঃ দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা لى اغفر ربরাব্বিগফিরলীদুই বার বলা।(ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭, আবু দাউদ হা/ ৮৫০, তিরমিযী হা/২৮৪, নাসাঈ হা/১১৪৫, মিশকাত হা/৯০০,৯০১)
অথবা فنى وعا وارزقنى نى واهد وارحمنى لى اغفر اللهم
আল্লাহুম্মাগ্ফিরলী ওয়ার হাম্নী, ওয়াহ্দিনী ওয়ার ঝুক্বনী ওয়াআ-ফেনী ।(তিরমিযী হা/-২৮৪, আবু দাউদ হা/-৮৫০, ইবনু মাজাহ হা/-৮৯৮,মিশকাত হা/৯০০)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে রিজিক দান করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন
অতঃপর পুনরায় আগের মত আল্লাহু আকবরবলে দ্বিতীয়বার সিজদায় যেতে হবেএবং আগের সেই তাসবীহ পাঠ করতে হবেঅতঃপর আল্লাহু আকবরবলে সুস্থিরভাবে সিজদাহ থেকে উঠে আবার আগের মত বসতে হবে, যেন প্রত্যেক হাড় নিজের যায়গায় বসে যায়
(বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৮০১)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) এ রকম চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় মাটিতে দুহাত বিছিয়ে সিজদাহ করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, আবু দাউদ হা/৭৮৩)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (ছাঃ) বলেছেন, ---- তোমাদের কেউ যেন সিজদাহ দেওয়ার সময় দুহাত বিছিয়ে না দেয়, যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। (বুখারী হা/৮২২, তাওহীদ প্রকাশনী, ইঃ ফাঃ ৭৮৪)
১.ইয়াযিদ ইবনু আবী হাবীব বলেন, দুজন মহিলা সালাত রত অবস্থায় রাসূল(ছাঃ) তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সিজদাহর সময় তোমরা শরীরের কিছু অংশ মাটির সাথে ঠেকিয়ে দাওকারন মহিলাদের সিজদাহ পুরুষের মত নয়। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৫)
হাদীসটি যঈফ। (সিলসিলা যইফাহ হা/২৬৫২)
বিশ্লেষণ ঃ উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে ইমাম বায়হাক্বী নিজেই বলেছেন, এই বিষয়ে দুইটি মারফূহাদীসে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু কোনটিই নির্ভরযোগ্য নয় (বায়হাক্বী, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১০৫০)
আবূ দাউদ মিরাসালে এই মুরসাল বর্ণনাটি আছে তাও উক্ত সনদে ইয়াযীদ বিন আবী হাবিবযঈফ রাবীমুরসালবর্ণনা অগ্রহনযোগ্য কারন যে সনদের শেষ ভাগে তাবেঈর পরের ব্যক্তি অর্থাৎ সাহাবীকে উহ্য রেখে তাবেঈ বলবেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এরুপ সনদের হাদীসকে মুরসাল বলা হয়। (এর সমর্থনে কোন মারফু অথবা মাওকুফ হাদীস না থাকলে এরুপ বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয়)তার পরও বর্ণনার সনদটি যঈফঅতএব বর্ণনাটি আমলের প্রশ্নই ওঠে না
একজন তাবেঈ রাসূল (ছাঃ) এর সঙ্গে কোন সাহাবার সুত্র ছাড়া তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন
(তাবেঈ তারাই, যারা রাসূল (ছাঃ) কে দেখেননি তবে সাহাবাদের থেকে হাদীস শিখেছেন এবং সহচর)
২. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন মহিলা যখন সালাতে বসবে তখন সে তার এক উরুর সাথে অন্য উরু লাগিয়ে রাখবে এবং যখন সে সিজদাহ দিবে তখন তার পেট দুই উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে যেন তা তার জন্য পর্দা স্বরুপ হয়আর তখন আল্লাহতাআলা তা লক্ষ্য করেন এবং ফেরেশতাদেরকে ডেকে বলেন, তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪ ; ‘নবীজীর নামায৩৩৭-৩৩৮ পৃষ্ঠা)
বিশ্লেষনঃ উক্ত বর্ণনা যঈফ ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে নিজেই যঈফ বলেছেন এবং প্রত্যাখ্যান করেছেন। (সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪ এর আলোচনা)
মাওলানা আব্দুল মালেক বায়হাক্বী থেকে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন কিন্তু বর্ণনাটি যে যঈফ তা উল্লেখ করেননিযঈফ বর্ণনা দ্বারা দ্বীনি আমলের মূল (বিধান) দলীল সাব্যস্ত হয় না
ইমাম আহমাদের মাসায়েল গ্রন্থে ইবনে উমার থেকে নিজ স্ত্রীদের এক পায়ের উপর অন্য পা আড়াআড়ি করে বসার আদেশ সূচক যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে এই সনদের মধ্যে আবদল্লাহ বিন উমরী নামক রাবী যঈফ

No comments: