• আমাদের দাওয়াত : সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর। আসুন! পবিত্র কুর‘আন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি।

26 June, 2015

ছাদাক্বাতুল ফিতরের বিধান



মুহাম্মাদ লিলবর আল-বারাদী
আল্লাহ তাআলা মানুষকে উদ্দেশ্যবিহীন সৃষ্টি করেননিতিনি বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)
ইবাদত এমন একটি ব্যাপক শব্দ যা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে পালনকৃত এমন সব কথা ও কাজের সমষ্টি, যা আল্লাহ পসন্দ করেন ও ভালবাসেনআল্লাহর ইবাদত গ্রহণীয় হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছেএক. একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমস্ত ইবাদত হতে হবেদুই. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতী পন্থা অনুযায়ী তা পালন করতে হবে
ইবাদত পালনে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে আল্লাহ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ারও ব্যবস্থা রেখেছেনছিয়াম হল মহান আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে অন্যতমআর এই ছিয়াম পালনে যে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকে, তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায়ের বিধান রেখেছেনএ বিধান আমাদের সুবিধার্থে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা সমীচীন নয়কেননা ইসলাম হল একমাত্র অভ্রান্ত, ত্রুটিমুক্ত ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা
দ্বীন ইসলাম যখন পূর্ণতা পেয়েছে, তখন অপূর্ণতার সংশয় মনে ঠাঁই দেয়া নিতান্তই মূর্খতাসুতরাং দ্বীনকে অপূর্ণাঙ্গ মনে করার অর্থই হল কুরআন-হাদীছের অপূর্ণতা (নাঊযুবিল্লাহ)আর এটা অসম্ভব, অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত ধারণা মাত্রপূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের প্রতি অবতীর্ণ আসমানী গ্রন্থ বিকৃত হয়েছেকিন্তু শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ কুরআন অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমানতবে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ বিকৃত করার অপপ্রয়াস চলেছে নানাভাবেকিন্তু বিভিন্ন মুহাদ্দিছগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে তা আজও অম্লান রয়েছেতথাপিও কিছু লোক ক্বিয়াস দ্বারা ছহীহ হাদীছ বিকৃত করে চলেছেযেমন ছাদাক্বাতুল ফিতর খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে তার সমমূল্য দিয়ে আদায় করাআলোচ্য নিবন্ধে ছাদাক্বাতুল ফিতরের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করা হ।-

ছাদাক্বাতুল ফিতর কার উপর ফরয :
ছাদাক্বাতুল ফিতর মুসলমান নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, সকলের জন্য আদায় করা ফরযএ মর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمَرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْحُرِّ وَالْعَبْدِ وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ.
ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ছাপরিমাণ খেজুর বা যব যাকাতুল ফিৎর হিসাবে ফরয করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন[1] ঈদের দিন সকালেও যদি কেউ মৃত্যুবরণ করেন, তার জন্য ফিৎরা আদায় করা ফরয নয়আবার ঈদের দিন সকালে কোন বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে তার পক্ষ থেকে ফিৎরা আদায় করা ফরয[2] ছাদাক্বাতুল ফিতর হল জানের ছাদাক্বা, মালের নয়বিধায় জীবিত সকল মুসলিমের জানের ছাদাক্বা আদায় করা ওয়াজিবকোন ব্যক্তি ছিয়াম পালনে সক্ষম না হলেও তার জন্য ফিৎরা ফরয
ছাদাক্বাতুল ফিতরের পরিমাণ :
প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক ছাখাদ্যশস্য যাকাতুল ফিৎর হিসাবে বের করতে হবেছাহচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওযন করার পাত্রনবী করীম (ছাঃ)-এর যুগের ছাহিসাবে এক ছা‘-তে সবচেয়ে ভাল গম ২ কেজি ৪০ গ্রাম হয়বিভিন্ন ফসলের ছাওযন হিসাবে বিভিন্ন হয়এক ছাচাউল প্রায় ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হয়তবে ওযন হিসাবে এক ছাগম, যব, ভুট্টা, খেজুর ইত্যাদি ২ কেজি ২২৫ গ্রামের বেশী হয়ইরাকী এক ছাহিসাবে ২ কেজি ৪০০ গ্রাম অথবা প্রমাণ সাইজ হাতের পূর্ণ চার অঞ্জলী চাউলবর্তমানে আমাদের দেশে এক ছাতে আড়াই কেজি চাউল হয়
অর্ধ ছাফিতরা আদায় করা সুন্নাত বিরোধী কাজমুআবিয়া (রাঃ)-এর যুগে মদীনায় গম ছিল নাসিরিয়া হতে গম আমদানী করা হতাই উচ্চ মূল্যের বিবেচনায় তিনি অর্ধ ছাগম দ্বারা ফিৎরা দিতে বলেনকিন্তু বিশিষ্ট ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) সহ অন্যান্য ছাহাবীগণ মুআবিয়া (রাঃ)-এর এই ইজতিহাদী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ ও প্রথম যুগের আমলের উপরেই কায়েম থাকেনযারা অর্ধ ছাগম দ্বারা ফিৎরা আদায় করেন, তারা মুআবিয়া (রাঃ)-এর রায়ের অনুসরণ করেন মাত্রইমাম নবভী (রহঃ) বলেন, সুতরাং অর্ধ ছাফিৎরা আদায় করা সুন্নাহর খেলাপরাসূল (ছাঃ) যাকাতের ও ফিতরার যে হার নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা রদবদল করার অধিকার কারো নেই[3] এ ব্যাপারে ওমর (রাঃ) একটি ফরমান লিখে আমর ইবনে হাযম (রাঃ)-এর নিকটে পাঠান যে, যাকাতের নিছাব ও প্রত্যেক নিছাবে যাকাতের যে, হার তা চির দিনের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেনএতে কোন যুগে, কোন দেশে কমবেশী অথবা রদবদল করার অধিকার কারো নেই[4]
ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় ও বণ্টনের সময়কাল :
ছাদাক্বাতুল ফিতর ঈদের দুএক দিন পূর্বে আদায় ও পরে বণ্টন করা ওয়াজিবঈদুল ফিতরের পূর্বে ছাহাবায়ে কেরাম বায়তুল মাল জমাকারীর নিকটে ফিৎরা জমা করতেনফিৎরা আদায়ের এটাই সুন্নাতী পন্থা, যা ঈদের ছালাতের পর হক্বদারগণের মধ্যে বণ্টন করতে হবে[5]
ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন[6]
অন্যত্র রয়েছে, ঈদের ছালাতের পূর্বে দায়িত্বশীলের কাছে ফিৎরা জমা করা ওয়াজিব[7] ইবনে ওমর (রাঃ) ঈদের দুএক দিন পূর্বে জমাকারীর কাছে ফিৎরা পাঠাতেন[8]
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিয়াম পালনকারীর জন্য ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেনযে ব্যক্তি ঈদের ছালাতের পূর্বে আদায় করবে তা ছাদাক্বাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবেআর যে ব্যক্তি ঈদের ছালাতের পর আদায় করবে তা সাধারণ ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য হবে[9]
ঈদের ছালাতের পূর্বে ফিৎরা বণ্টন করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাবরং পরে বণ্টনের প্রমাণ পাওয়া যায়[10] ইবনে ওমর (রাঃ) অনুরূপভাবে জমা করতঃ ঈদের ছালাতের পরে হক্বদারগণের মধ্যে বণ্টন করতেন[11] অনেকে মনে করেন, ঈদের ছালাতের পূর্বে বণ্টন করা হলে গরীবদের সুবিধা হবেকিন্তু এ মর্মে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়[12] সুতরাং মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে ফিৎরা বণ্টনের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা পালন করা আবশ্যক
ফিতরা পাওয়ার হক্বদারগণ :
ছাদাক্বাতুল ফিতর এলাকার অভাবী ও দরিদ্র মানুষের মাঝে বণ্টন করবেকেননা ধনীদের সম্পদে গরীবের হক্ব আছেমহান আল্লাহ বলেন, ‘ধনীদের সম্পদে রয়েছে, ফকীর, বঞ্চিতদের অধিকার’ (যারিয়াত ৫১/১৯)এতদ্ব্যতীত যাকাত আদায়ের নিম্নোক্ত আটটি খাতেও ফিতরা বণ্টন করা যাবেমহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنَ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ যাকাত হল কেবল ফকীর, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক্ব এবং তা দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য ও মুসাফিরদের জন্যএই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান’ (তওবা ৯/৬০)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ যাদের কথা বলেছেন তারা প্রত্যেকেই যাকাত পাওয়ার হক্বদার
ছাদাক্বাতুল ফিতর কোন বস্ত্ত দ্বারা আদায় ওয়াজিব :
প্রত্যেক দেশের প্রধান খাদ্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করবেএ মর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى رَجَاءٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَخْطُبُ عَلَى مِنْبَرِكُمْ يَعْنِى مِنْبَرَ الْبَصْرَةِ، يَقُولُ صَدَقَةُ الْفِطْرِ صَاعٌ مِنْ طَعَامٍ.
আবু রাজা‘ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে তোমাদের মিম্বরে অর্থাৎ বছরার মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা দানরত অবস্থায় বলতে শুনেছি, ছাদাক্বাতুল ফিতরের পরিমাণ হল মাথাপিছু এক ছাখাদ্যদ্রব্য[13]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىَّ رضى الله عنه يَقُوْلُ كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمَرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيْبٍ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা যাক্বাতুল ফিতর আদায় করতাম এক ছাখাদ্য (طعام) অথবা এক ছাযব বা এক ছাখেজুর অথবা এক ছাপনীর অথবা এক ছাকিশমিশ দিয়ে[14]
আমাদের এই কৃষি প্রধান দেশে প্রধান খাদ্য (طعام) চাউলসেকারণ চাউল দিয়ে ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করাই উত্তমখাদ্যশস্যের মূল্য দিয়ে ছাদাক্বাতুল ফিতর প্রদানের স্বপক্ষে কুরআন-হাদীছে স্পষ্ট কোন দলীল নেইসুতরাং মুদ্রা দিয়ে ফিৎরা আদায় করা কোন বিশিষ্ট জনের তাক্বলীদ (অন্ধ অনুসরণ) বৈ কিছুই নয়
আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করতে হলে নবী করীম (ছাঃ) প্রদর্শিত পন্থায়ই তা করা অপরিহার্যতাছাড়া চার খলীফা, ছাহাবীগণ, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈগণ সকলেই খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করেছেনখাদ্যশস্যের মূল্যে ফিৎরা আদায়ের স্বপক্ষে একটি দুর্বল, মওযূ হাদীছও প্রমাণ হিসাবে পাওয়া যায় নাসুতরাং খাদ্যশস্য দিয়েই ফিৎরা আদায় করতে হবে
খাদ্যশস্যের মূল্য দ্বারা ফিৎরা আদায় :
খাদ্যশস্য ব্যতীত অর্থ কিংবা দীনার-দিরহাম দিয়ে ফিৎরা আদায় করেছেন মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের কোন আমল পাওয়া যায় নাখাদ্যশস্যের স্বপক্ষেই হাদীছে এসেছেআবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা খাদ্যশস্য (طعام) যব, খেজুর, পনীর, কিশমিশ দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম[15]
طعام শব্দটির অর্থ হল খাদ্যপরিভাষায় যা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করা যায়, তাই طعام।  طعام দ্বারা টাকা-পয়সা বুঝায় নাতাছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পূর্ব যুগ হতেই মক্কা-মদীনায় দিরহাম-দীনার প্রভৃতি মুদ্রার প্রচলন ছিলকিন্তু তিনি এক ছাখাদ্যশস্যের মূল্য হিসাবে দিরহাম প্রদানের নির্দেশ দেননিবরং খাদ্যশস্য দিয়ে ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় ওয়াজিব করেছেন
খাদ্যশস্য ব্যতীত মূল্য দিয়ে ফিৎরা প্রদানে অনেক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়যেমন-
নং
ব্যক্তির নাম
চাউলের নাম
প্রতি কেজি
২১/২  কেজির মূল্য
মূল্য পার্থক্য
আব্দুল করীম মিনিকেট ৭০/= ১৭৫/= ১০০/=
আব্দুর রহীম দাউদকানী ৬০/= ১৫০/= ৭৫/=
আব্দুস সালাম জিরাশাল ৫০/= ১২৫/= ৫০/=
আব্দুল জববার ব্রি ২৮ ৪০/= ১০০/= ২৫/=
আব্দুস সাত্তার গুটি স্বর্ণা ৩০/= ৭৫/= ০০/=
এখানে আব্দুল করীম সবচেয়ে দামী ও আব্দুস সাত্তার কম দামী চাউলের ভাত খায়এদের দুজনে ছাদাক্বাতুল ফিতর হিসাবে খাদ্যশস্যের পরিবর্তে যদি মূল্য প্রদান করা হয়, তাহলে আড়াই কেজি চাউলের মূল্যের পার্থক্য হবে ১০০/= টাকাকিন্তু তারা উভয়েই যদি খাদ্যশস্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করে, তবে তাদের পরিমাণ আড়াই কেজি বা একই সমান হবেতাছাড়া বণ্টনের সময় হতদরিদ্র ব্যক্তি সবচেয়ে দামী চাউলের ছাদাক্বা পেয়েও খুশী হবে
খাদ্যশস্যের মূল্য দিয়ে ফিৎরা আদায় করা, ছাদাক্বা ক্রয় করার নামান্তরযা ইসলামে নিষিদ্ধআব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) তাঁর একটি ঘোড়া এক ব্যক্তিকে সওয়ার হওয়ার জন্য আল্লাহর রাস্তায় ছাদাক্বা করে দিলেন, যে ঘোড়াটি রাসূল (ছাঃ) তাকে দান করেছিলেনতারপর তিনি (ওমর) খবর পেলেন, লোকটি ঘোড়াটি বাজারে বিক্রি করছেএ খবর শুনে ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি ঘোড়াটি ক্রয় করতে পারি? রাসূল (ছাঃ) জবাবে বললেন, তা ক্রয় কর না এবং তোমার ছাদাক্বা ফেরৎ নিও না[16] আলোচ্য হাদীছ হতে প্রমাণিত হয় যে, যে কোন প্রকারের ছাদাক্বা ক্রয় করা হারামযদি ক্রয় করা হালাল হত তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-কে ক্রয় করার অনুমতি দিতেন এবং ফিৎরা খাদ্যশস্যের পরিবর্তে দিরহাম-দীনার প্রদানের অনুমতিও দিতেনকিন্তু তিনি তা করেননিচার খলীফা, ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ কেউই অনুরূপভাবে ছাদাক্বা ক্রয় করার পক্ষে ছিলেন না
যারা ফিৎরা দ্রব্যমূল্যে (টাকায়) প্রদানের স্বপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য কি তা আদৌ বোধগম্য নয়কেননা ফিৎরা হল ফরয এবং কুরবানী হল সুন্নাতফরযকে যদি পরিবর্তন অথবা পরিমার্জন করা জায়েয হয়, তাহলে কুরবানীর পরিবর্তে তার মূল্য প্রদানে বাধা কোথায়? নিয়ত তো বেশ ছহীহযেহেতু কুরবানীর সমমূল্য জায়েয নয়সুতরাং ফিতরার মূল্য প্রদানও জায়েয নয়এ সম্পর্কে ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘যদি কেউ কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করতে চান, তবে তিনি মুহাম্মাদী শরীআতের প্রকাশ্য বিরোধিতা করবেন[17]
অতএব পরকালে পরিত্রাণের নিমিত্তে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা আমাদের সকলের জন্য অপরিহার্যঅন্যথা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবেআল্লাহ আমাদেরক হেফাযত করুন-আমীন!!




[1]. বুখারী-মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৫
[2]. মিরআত ৬/১৮৫ পৃঃ
[3]. ফাৎহুল বারী ৩/৪৩৮ পৃঃ
[4]. তাফসীর মাআরেফুল কুরআন, পৃঃ ৫৭৫
[5]. বুখারী হা/১৫১১, ‘যাকাতঅধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭
[6]. বুখারী হা/১৫০৯; মুসলিম হা/৯৮৬
[7]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৫
[8]. মুয়াত্ত্বা মালেক, হা/৩৪৩; ইবনু খুযায়মাহ হা/২৩৯৭, সনদ ছহীহ
[9]. আবূদাঊদ হা/১৬০৯, হাসান ছহীহ
[10]. বুখারী, মিশকাত হা/২১২৩
[11]. ফাৎহুল বারী ৩/৪৩৯-৪০; মিরআত ১/২০৭
[12]. ইরওয়াউল গালিল হা/৮৪৪, ৩/৩৩২
[13]. নাসাঈ হা/২৫২২
[14]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৬
[15]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৬
[16]. বুখারী হা/৩/২৫৭১ (কিতাবুল ওয়াসা) ও হা/৩/২৭৪৯-৫০ কিতাবুল জিহাদঅধ্যায়
[17]. মাজমূআ ফাতওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ২৬/৩০৪; মুগনী ১১/৯৪-৯৫ পৃঃ

No comments: