• আমাদের দাওয়াত : সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর। আসুন! পবিত্র কুর‘আন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি।

06 July, 2017

মৃত্যুকে স্মরণ



প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ : جَاءَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا مُحَمَّدُ، عِشْ مَا شِئْتَ فَإِنَّكَ مَيِّتٌ، وَأَحْبِبْ مَنْ أَحْبَبْتَ فَإِنَّكَ مَفَارِقُهُ، وَاعْمَلْ مَا شِئْتَ فَإِنَّكَ مَجْزِيٌّ بِهِ. ثُمَّ قَالَ : يَا مُحَمَّدُ شَرَفُ الْمُؤْمِنِ قِيَامُ اللَّيْلِ وَعِزُّهُ اسْتِغْنَاؤُهُ عَنِ النَّاسِِ- رواه الحاكم بإسناد صحيح
অনুবাদ : সাহল বিন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জিব্রীল এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যতদিন খুশী জীবন যাপন করকিন্তু মনে রেখ তুমি মৃত্যুবরণ করবেযার সাথে খুশী বন্ধুত্ব করকিন্তু মনে রেখ তুমি তাকে ছেড়ে যাবেযা খুশী তুমি আমল করকিন্তু মনে রেখ তুমি তার ফলাফল পাবেজেনে রেখ, মুমিনের মর্যাদা হল ইবাদতে রাত্রি জাগরণে এবং তার সম্মান হল মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যে।[1]

আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন, إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَনিশ্চয়ই তুমি মরবে এবং তারাও মরবে’ (যুমার ৩৯/৩০)বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে আল্লাহ নিজে এবং জিব্রীলকে পাঠিয়ে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনঅতএব মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া দুটিই মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্যকেননা দুনিয়ায় লিপ্ত মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়এই ফাঁকে শয়তান তাকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে নেয়একারণেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِতোমরা বেশী বেশী করে স্বাদ বিনষ্টকারী বস্ত্তটির কথা স্মরণ কর।[2] অর্থাৎ মৃত্যুকে স্মরণ করযাতে দুনিয়ার আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং আল্লাহর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়সেই সাথে তার দীদার লাভের জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয়
মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী :
প্রাণী মাত্রই মরবেজন্ম ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িতদুটির কোনটির ক্ষমতা মানুষের হাতে নেইআল্লাহর হুকুমেই জন্ম হয়আল্লাহর হুকুমেই মৃত্যু হয় কখন হবে, কোথায় হবে, কিভাবে হবে, তা কারো জানা নেইজীবনের সুইচ তাঁরই হাতে, যিনি জীবন দান করেছেনঅতঃপর জীবনদাতার সামনে হাযিরা দিয়ে জীবনের পূর্ণ হিসাব পেশ করতে হবেহিসাব শেষে জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে ও সেখানেই চিরকাল শান্তিতে বাস করবে অথবা শাস্তি ভোগ করবেআল্লাহ বলেন,كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ- ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবেঅতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে ব্যক্তি সফলকাম হবেবস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)দুনিয়ার এ চাকচিক্যে আমরা পরকালকে ভুলে যাইঅথচ নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল শেষে আমাদের সেখানে যেতেই হবেকেউ আমাকে জগত সংসারে ধরে রাখতে পারবে নাআল্লাহ বলেন,وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلاًّ...- ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে নাসেজন্য একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে...’ (আলে ইমরান ৩/১৪৫)তিনি বলেন, ...وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ‘...আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবেনিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লোকমান ৩১/৩৪)তিনি আরও বলেন, ...فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ- ‘...অতঃপর যখন সেই সময়কাল এসে যায়, তখন তারা সেখান থেকে এক মুহূর্ত আগপিছ করতে পারে না’ (নাহল ১৬/৬১)দুনিয়ার পাগলেরা সুদৃঢ় ও সুউচ্চ প্রাসাদসমূহ নির্মাণ করেঅথচ তাকে চলে যেতে হবে সব ছেড়ে মাটির গর্তেযেখানে তার নীচে, উপরে, ডাইনে ও বামে থাকবে স্রেফ মাটিযা থেকে সে সারা জীবন গা বাঁচিয়ে চলেছেঅথচ আল্লাহ বলেন,أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍযেখানেই তোমরা থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেইএমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান কর’ (নিসা ৪/৭৮)কবি বলেন,
أَلاَ يَا سَاكِنَ الْقَصْرِ الْمُعَلَّى + سَتُدْفَنُ عَنْ قَرِيْبٍ فِى التُّرَابِ
قَلِيْلُ عُمْرُنَا فِي دَارِ دُنْيَا + وَمَرْجَعُنَا إِلَى بَيْتِ التُّرَابِ
(১)শোন হে সুউচ্চ প্রাসাদে বসবাসকারী! + সত্বর তুমি দাফন হবে মাটিতে। (২)ইহকালে আমরা আমাদের জীবনের অল্প সময়ই কাটিয়ে থাকি + আর আমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল হল মাটির ঘরে (কবরে)
কবরের অবস্থা :
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাইয়েতকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন তার কাছে নীলচক্ষু বিশিষ্ট দুজন ঘোর কৃষ্ণকায় ফেরেশতা আসেন যাদের একজনকে মুনকারও অন্যজনকে নাকীরবলা হয়তারা এসে বলেন, তুমি এ ব্যক্তি সম্পর্কে দুনিয়াতে কি বলতে? তখন সে যদি নেককার হয়, তাহলে বলবে, ইনি হলেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূলতখন তারা বলবেন, আমরা জানতাম তুমি একথাই বলবেঅতঃপর তার জন্য তার কবরকে দৈর্ঘে-প্রস্থে সত্তুর হাত করে প্রশস্ত করা হবে এবং সেটিকে আলোকময় করা হবেঅতঃপর বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে যাওসে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে যাব এবং তাদেরকে এই সুসংবাদ জানাবতখন ফেরেশতাদ্বয় বলবেন, ঘুমিয়ে যাও বাসর রাতের ঘুমের ন্যায় যে ঘুম কেউ ভাঙ্গাতে পারে না প্রিয়তম ব্যক্তি ব্যতীতযতদিন না আল্লাহ তাকে তার শয্যাস্থান থেকে উঠাবেন।[3]
জাবের (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, সে সূর্য অস্ত যেতে দেখবে এবং উঠে বসে চোখ মুছে বলবে, دَعُونِى أُصَلِّىছাড় আমি এখন (আছরের) ছালাত আদায় করব।[4] হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, তাকে উঠিয়ে বসানো হবে ভয়হীন ও দ্বিধাহীন চিত্তেঅতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কোন দ্বীনের উপর ছিলে? সে বলবে, ইসলামঅতঃপর বলা হবে, এই ব্যক্তি কে? সে বলবে, মুহাম্মাদ, যিনি আল্লাহর রাসূলযিনি আমাদের নিকটে আল্লাহর পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণাদি সহ এসেছিলেনঅতঃপর আমরা তাঁকে সত্য বলে জেনেছিলামতখন বলা হবে, তুমি কি আল্লাহকে দেখেছ? সে বলবে, কারু পক্ষে দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয় অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবেতখন সে সেখানকার ভয়ংকর দৃশ্য দেখবে যে, আগুনের ফুলকি সমূহ একে অপরকে দলিত-মথিত করছেএসময় তাকে বলা হবে, দেখ কি বস্ত্ত থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেনঅতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং সে জান্নাতের সুখ-সম্ভার দেখতে থাকবেতখন তাকে বলা হবে এটাই তোমার ঠিকানাতুমি দৃঢ় বিশ্বাসের উপরে ছিলেউক্ত বিশ্বাসের উপরেই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ এবং আল্লাহ চাহেন তো তার উপরেই তুমি পুনরুত্থিত হবে।[5]
বারা বিনআযেব (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ফেরেশতাদ্বয় তাকে বসাবেনঅতঃপর জিজ্ঞেস করবেন, তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব আল্লাহতারা বলবেন, তোমার দ্বীন কি? সে বলবে, আমার দ্বীন ইসলাম তারা বলবেন, এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল? সে বলবে, ইনি আল্লাহর রাসূলতারা বলবেন, কিভাবে তুমি এটা জানলে? সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছি ও তাঁকে সত্য বলে জেনেছি বস্ত্ততঃ এটাই হল আল্লাহর কালামের বাস্তবতা, যেখানে তিনি বলেছেন,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِينَআল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্য দ্বারা মযবূত রাখেন ইহকালে ও পরকালে এবং যালেমদের পথভ্রষ্ট করেন’ (ইবরাহীম ১৪/২৭)একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন যে, উক্ত আয়াতটি কবরের আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।[6] অতঃপর আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দিবেন যে, আমার বান্দা সত্য কথা বলেছে সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাওতাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও ও তার দিকে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাওঅতঃপর সেটি খুলে দেওয়া হবে ফলে তার দিকে জান্নাতের সুবাতাস ও সুগন্ধি আসতে থাকবেআর ঐ দরজাটি তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রসারিত করা হবে।[7]
আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাইয়েতকে দাফন শেষে যখন তার পরিবারবর্গ ও সঙ্গীসাথীরা ফিরে যায় এবং তাদের জুতার আওয়ায মাইয়েত অবশ্যই শুনতে থাকে, তখন দুজন ফেরেশতা আসেন ও তাকে উঠিয়ে বসান।... অতঃপর যদি সে মুনাফিক ও কাফের হয়, তখন তাকে এই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলবে, আমি জানি নালোকেরা যা বলত, আমিও তাই বলতামতাকে বলা হবে, তুমি তোমার জ্ঞান দিয়েও বুঝনিপাঠ করেও জানতে চেষ্টা করোনি...।[8]
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কবরে মাইয়েতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুনর্জীবিত করা হবেএই কবর মাটিতে হৌক বা অন্যত্র হৌককেননা কবর অর্থ মৃত্যুর পরবর্তী বরযখী জীবনযা দৃশ্যমান জগতের অন্তরালে থাকে (মিরআত ১/২১৭, ২২০)
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, অতঃপর সে যদি মন্দ লোক হয়, তাহলে তাকে বসানো হবে ভীত সন্ত্রস্ত ও দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায়বলা হবে তুমি কোন দ্বীনের উপরে ছিলে? সে বলবে, আমি জানি নাবলা হবে, এই ব্যক্তি কে? সে বলবে, লোকদের যা বলতে শুনেছি তাই বলতামঅতঃপর তাকে জান্নাতের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবেতখন সে তার সুখ-সম্ভার দেখতে থাকবেবলা হবে, তুমি দেখ যা তোমার থেকে আল্লাহ ফিরিয়ে নিয়েছেনঅতঃপর তাকে জাহান্নামের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবেসে সেখানকার আগুনের ফুলকি সমূহ দেখবে, যা একে অপরকে দলিত-মথিত করছেতখন তাকে বলা হবে, এটাই তোমার ঠিকানাযে বিষয়ে তুমি সন্দেহের উপরে ছিলে এবং সন্দেহের উপরেই তুমি মরেছআর এই সন্দেহের উপরেই আল্লাহ চাইলে তুমি পুনরুত্থিত হবে।[9]
বারা বিন আযেব (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, সে তিনটি প্রশ্নেই বলবে, হায় হায় আমি জানি নাতখন আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দিয়ে বলবেন, সে মিথ্যা বলেছেঅতএব তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাওজাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের দিকের একটি দরজা খুলে দাওঅতঃপর সেখান থেকে প্রচন্ড গরম লু হাওয়া তার কবরে প্রবাহিত হবেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর তার কবরকে তার উপর এমন সংকীর্ণ করা হবে যে, প্রচন্ড চাপে একদিকের পাঁজর অন্যদিকে প্রবেশ করবেঅতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে লোহার বড় হাতুড়ি সহ নিযুক্ত করা হবে, যদি ঐ হাতুড়ি পাহাড়ের উপরে মারা হ, তাহলে তা মাটি হয়ে যেতঅতঃপর সে তাকে মারতে থাকবেএসময় তার বিকট চিৎকার জ্বিন-ইনসান ব্যতীত পূর্ব ও পশ্চিমের সকল সৃষ্টিজগত শুনতে পাবেঅতঃপর সে মাটি হয়ে যাবে, আবার বেঁচে উঠবে।[10] অন্য বর্ণনায় এসেছে, এভাবেই সে শাস্তি পেতে থাকবে, যতদিন না আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান দিবসে তার শয্যাস্থান থেকে উঠান।[11]
মৃত্যু চিন্তা মানুষকে আল্লাহভীরু ও সৎকর্মশীল বানায় :
হযরত ওছমান গণী (রাঃ) কবরস্থানে গিয়ে কাঁদতেনযাতে দাড়ি ভিজে যেততাঁকে বলা ল জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনে আপনি কাঁদেন না, অথচ কবরে এসে কাঁদেন? জবাবে তিনি বলেন, কবর হল আখেরাতের প্রথম মনযিলযদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তাহলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য সহজ হয়ে যায়আর এখানে মুক্তি না পেলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েঅতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, কবরের চাইতে ভীতিকর দৃশ্য আমি আর দেখিনি।[12]
কবর ল নিঃসঙ্গ জগতসমাজ ও সংসারের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানে একাকী জীবন কাটাতে হবেবাইরের কেউ সেখানকার অবস্থা জানাবে না বা তিনিও বাইরের কাউকে তার অবস্থা জানাতে পারবেন নাকেউ তার কোন উপকার করতে পারবে না বা তিনিও কারু কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারবেন নাকেননা তিনি থাকবেন দুনিয়ার অন্তরালেআল্লাহ বলেন, وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَআর তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/১০০)তিনি স্বীয় নবীকে বলেন,إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلاَ تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَনিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃত ব্যক্তিকে এবং শুনাতে পারো না কোন বধিরকে, যখন তারা পিঠ ফিরে চলে যায়’ (নমল ২৭/৮০)তিনি আরও বলেন, وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِআর যে কবরে আছে তাকে তুমি শুনাতে পারো না’ (ফাত্বির ৩৫/২২)
বাড়ী-গাড়ী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, ভক্তকুল সবাইকে রেখে সবকিছু ছেড়ে কেবল এক টুকরো কাফনের কাপড় সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করতে হবেবিলাসিতায় কাটানো সুন্দর দেহটা পোকার খোরাক হবেজীবনের সকল আশা ও আকাংখা মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবেসকল হাসি সেদিন কান্নায় পরিণত হবেমানুষ তাই মরতে চায় নাসর্বদা সে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়অথচ আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلاَقِيكُمْ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَতুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা অবশ্যই তোমাদের কাছে উপস্থিত হবে অতঃপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেই সত্তার কাছে, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছু সম্পর্কে অবগতঅতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন’ (জুমআ ৬২/৮)
সে সময় মানুষ বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যদি তুমি আমাকে আরও কিছু দিনের জন্য সময় দিতে, তাহলে আমি ছাদাক্বা করে আসতাম ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতামঅথচ নির্ধারিত সময়কাল যখন এসে যাবে, তখন আল্লাহ কাউকে আর অবকাশ দিবেন নাবস্ত্ততঃ তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (মুনাফিকূন ৬৩/১০-১১)অন্য আয়াতে এসেছে, ‘অবশেষে যখন তাদের কারু কাছে মৃত্যু এসে যায়, তখন সে বলে হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফেরত পাঠানযাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি করিনি কখনই নয়এটা তো তার একটি (বৃথা) উক্তি মাত্র যা সে বলে...’ (মুমিনূন ২৩/৯৯-১০০)
আল্লাহর দীদার কামনা :
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সর্বদা আল্লাহর দীদার লাভের জন্য উন্মুখ থাকেকেননা সেখানে যে পুরস্কার সমূহ লুকিয়ে রয়েছে, তার কোন তুলনা নেইহাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ. قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ (فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِىَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ) ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সুখ-সম্ভার প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শুনেনি, মানুষের হৃদয় কখনো কল্পনা করেনিরাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ বিষয়ে তোমরা চাইলে পাঠ কর, ‘কেউ জানেনা তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী কি কি বস্ত্ত লুক্কায়িত রয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ’ (সাজদাহ ৩২/১৭)।[13] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জান্নাতের একটি চাবুক রাখার স্থান সমস্ত দুনিয়া ও তার মধ্যস্থিত সকল নেমত থেকে উত্তম।[14]
প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি আল্লাহকে চিনেন, তিনি সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করেন কেননা মৃত্যু হল প্রধান ফটকযেটি উন্মোচিত হলেই আখেরাতের সুখ-শান্তির দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়বনু ইস্রাঈলের হাবীব নাজ্জারকে যখন তার অবিশ্বাসী কওম হত্যা করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, তখন তিনি সেখানে গিয়ে বলেন, يَالَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ- بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَহায় আমার কওম যদি জানতো’! ‘একথা যে, আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন’ (ইয়াসীন ৩৬/২৬-২৭)ঈমান কবুলকারী জাদুকরদের হুমকি দিয়ে ফেরাঊন যখন বলেছিল, ‘শীঘ্রই তোমরা তোমাদের পরিণতি জানতে পারবেআমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াবজবাবে জাদুকররা বলেছিল,لاَ ضَيْرَ إِنَّا إِلَى رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ- إِنَّا نَطْمَعُ أَن يَّغْفِرَ لَنَا رَبُّنَا خَطَايَانَا أَنْ كُنَّا أَوَّلَ الْمُؤْمِنِينَকোন ক্ষতি নেইআমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবআশা করি আমাদের প্রতিপালক আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেনকেননা আমরা (ক্বিবতীদের মধ্যে) ঈমান আনয়নকারীদের অগ্রগামী’ (শোআরা ২৬/৪৯-৫১)।[15] অন্যদিকে জাদুকরদের মুকাবিলায় মূসা ও হারূণের বিজয়ের খবর শুনে ফেরাঊনের নেককার স্ত্রী ও মূসার পালক মাতা আসিয়া আল্লাহর উপরে ঈমান ঘোষণা করেনতখন ফেরাঊন তাকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করেএসময় আসিয়া আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে বলেন, رَبِّ ابْنِ لِي عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَহে আমার পালনকর্তা! তোমার নিকটে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর! আমাকে ফেরাঊন ও তার পারিষদবর্গের হাত থেকে উদ্ধার কর এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দাও’ (তাহরীম ৬৬/১১)
আল্লাহকে দর্শন :
প্রকৃত ঈমানদারগণ সর্বদা আল্লাহর দর্শন কামনা করেনসেকারণ দুনিয়ার চাইতে আখেরাত তাদের নিকট সর্বাধিক কাম্যতাই মৃত্যুর পর্দা উন্মোচিত হলেই সে দেখতে পায় এক আনন্দময় জগতঅতঃপর জান্নাতে যখন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ স্বীয় নূরের পর্দা সরিয়ে দিয়ে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করবেন ও সে তাঁর দিকে তাকাবে, তখন সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেএর চাইতে আনন্দঘন মুহূর্ত তার জন্য আর হবে না।[16] সেদিন আল্লাহকে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে রাত্রির মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়।[17] বস্ত্ততঃ এটাই হল তার জন্য সর্বাধিক প্রিয় মুহূর্তআর সেকারণেই আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) মৃত্যুর প্রাক্কালে কেবলই বলেছিলেন, اللَّهُمَّ الرَّفِيْقَ الْأَعْلَيহে আল্লাহ! হে সর্বোচ্চ বন্ধু’! আর এটাই ছিল তাঁর শেষ কথাআয়েশা (রাঃ) বলেন, এর দ্বারা আমি বুঝলাম, এখন তিনি আর আমাদের পসন্দ করবেন না।[18]
বস্ত্ততঃ দুনিয়াদাররা দুনিয়া ছাড়তে চায় নাতারা এখানকার ক্ষণস্থায়ী আরাম-আয়েশ থেকে বের হতে চায় নাপক্ষান্তরে ঈমানদারগণ দুনিয়ার চাইতে আখেরাতকে ভালবাসেনতারা এখানকার কষ্ট-মুছীবতকে হাসিমুখে বরণ করেন আখেরাতে চিরস্থায়ী শান্তি লাভের জন্য কারণেই বলা হয়েছে, দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার ও কাফেরের জন্য জান্নাত।[19] আর তাই মুমিন দ্রুত দুনিয়া ছেড়ে আখেরাতে যেতে চায় তার প্রিয়তমের সাক্ষাৎ লাভের জন্যঠিক যেমন কারাবন্দী বা প্রবাসী ব্যক্তি পাগলপারা হয়ে ছুটে আসে তার প্রিয়তম সাথী ও পরিবারের কাছেএখানে মৃত্যু কামনা নয়বরং প্রিয়তমের দীদার কামনাই মুখ্যতাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُযে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে অপসন্দ করে, আল্লাহ তার সাক্ষাতকে অপসন্দ করেন।[20] ফলে আল্লাহ যে কাজ পসন্দ করেন, মুমিন সর্বদা সে কাজেই লিপ্ত থাকেযে কাজ তিনি পসন্দ করেন না, মুমিন তা কখনই করে নাযদিও শয়তান তাকে সে কাজ করার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করে আল্লাহ বলেন, ...فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘...অতএব যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করেসে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১৮/১১০)অর্থাৎ লোক দেখানো বা শুনানোর জন্য নয়, বরং খালেছ অন্তরে স্রেফ আল্লাহকে রাযী-খুশী করার জন্য ইবাদত করেনইলে সেটা শিরক হবেযার পাপ আল্লাহ ক্ষমা করেন না’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)আল্লাহ শিরককারীর জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন’ (মায়েদাহ ৫/৭২) মোটকথা নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাস ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সৎকর্মই পরকালে আল্লাহর দীদার লাভের একমাত্র উপায়
মুমিন যতদিন দুনিয়ায় থাকে, ততদিন সে তার জান-মাল-সময়-শ্রম সবকিছু ব্যয় করে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের জন্যযেন খুশীমনে তার প্রতিপালকের সামনে নেকীর ডালি নিয়ে হাযির হতে পারেঅন্যদিকে তার প্রতিপালক তাকে খুশী হয়ে পুরস্কারের ডালি ভরে দেনআল্লাহ বলেন,وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَআর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবেঅতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)বস্ত্ততঃ এটিই ছিল বান্দার প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ বাণীক্বিয়ামতের দিন দয়াময় প্রতিপালক সালামদিয়ে মুমিনদের সম্ভাষণ জানাবেন’ (ইয়াসীন ৩৬/৫৮)
পাপ-পঙ্কিলতায় ভরা এ পৃথিবীকে মুমিন তার জন্য পরীক্ষাস্থল মনে করেআল্লাহ তাকে পরীক্ষার জন্য যতদিন চাইবেন, ততদিন সে এখানে থাকবে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের সাথে, সর্বোচ্চ নেকী সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যেমাঝে-মধ্যে আল্লাহ তার বান্দাকে কঠিন বিপদে ফেলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন, তাকে সাবধান করার জন্যযাতে সে আবার পূর্ণোদ্যমে নেকী অর্জনে লিপ্ত হয়জান্নাতের সর্বোচ্চ তাসনীমঝর্ণা লাভের জন্য সে প্রতিযোগিতা করেআল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের চেহারাসমূহে স্বাচ্ছন্দ্যের প্রফুল্লতা দেখতে পাবেতাদেরকে মোহরাংকিত বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবেতার মোহর হবে মিশকেরআর এরূপ বিষয়েই প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিতআর তাতে মিশ্রণ থাকবে তাসনীমেরএটি একটি ঝর্ণা, যা থেকে পান করবে নৈকট্যশীলগণ’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/২৪-২৮)
নিঃসন্দেহে আল্লাহর দীদার কেবল জান্নাতীরাই লাভ করবে, জাহান্নামীরা নয়আল্লাহ বলেন,كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ- ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيمِকখনই নাতারা সেদিন তাদের প্রতিপালকের দর্শন হতে বঞ্চিত থাকবেঅতঃপর তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৫-১৬)
মৃত্যু কামনা নয় :
অনেক মানুষ মৃত্যু কামনা করেকিন্তু তাতে আল্লাহর দীদার লাভের প্রেরণা থাকে নাঐ মৃত্যু তার জন্য ক্ষতির লক্ষণসেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِى مَكَانَهُ. مَا بِهِ حُبُّ لِقَاءِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّঅতদিন ক্বিয়ামত হবে না, যতদিন না কোন ব্যক্তি কারু কবরের পাশ দিয়ে যাবে এবং বলবে, হায় যদি আমি তোমার স্থানে হতাম! অথচ তার মধ্যে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের আকাংখা থাকবে না।[21] অন্য বর্ণনায় এসেছে, لَيْسَ بِهِ الدِّينُ إِلاَّ الْبَلاَءُতার মধ্যে দ্বীন থাকবে না বিপদের ভয় ব্যতীত।[22] অর্থাৎ আল্লাহর দীদার লাভের জন্য সে মৃত্যু কামনা করবে নাবরং দুনিয়ার কষ্ট থেকে রেহাই পাবার জন্য সে মৃত্যু কামনা করবেএরূপ মৃত্যু আদৌ কাম্য নয়
পরকালের পাথেয় সঞ্চয় :
প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই যে দুনিয়াকে পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেযেদিন তার সাথে কেউ থাকবে না তার আমল ব্যতীতযা যথাযথভাবে না থাকলে লজ্জিত হতে হবে ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, কোন মুমিন উত্তম? তিনি বললেন, যে সর্বোত্তম চরিত্রবানলোকটি বলল, কে সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُমৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণকারী এবং তার পরবর্তী জীবনের জন্য সর্বাঙ্গীন সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণকারীতারাই হল প্রকৃত জ্ঞানী।[23] এর কারণ এই যে, মৃত্যু পরবর্তী অদৃশ্য জীবন সম্পর্কে তিনিই ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী এবং মানব জগতের মধ্যে তিনিই হলেন একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীযা মিরাজের রাত্রিতে আল্লাহ তাকে দেখিয়েছেন
আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন ছালাত শেষে রাসূল (ছাঃ) আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমামঅতএব রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরানোর ব্যাপারে তোমরা আমার আগে বেড়ো নাকারণ আমি আমার সম্মুখে ও পিছনে দেখতে পাইযার হাতে আমার জীবন, তার কসম করে বলছি, যদি তোমরা দেখতে যা আমি দেখেছি, তাহলে অবশ্যই তোমরা হাসতে কম ও কাঁদতে বেশী লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি দেখেছেন? তিনি বললেন, জান্নাত ও জাহান্নাম।[24]
অতএব জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের প্রবল আকাংখা নিয়েই সৎকর্ম করতে হবে
কবি বলেন,
تَزَوَّدْ مِنْ مَعَاشِكْ لِلْمَعَادِ + وَقُمْ لِلَّهِ وَاعْمَلْ خَيْرَ زَادٍ
وَلاَ تَجْمَعْ مِنَ الدُّنْيَا كَثِيْرًا + فَإِنَّ الْمَالَ يُجْمَعُ لِلنَّفَادِ
أَتَرْضَى أَنْ تَكُوْنَ رَفِيْقَ قَوْمٍ + لَهُمْ زَادُ وَأَنْتَ بِغَيْرِ زَادٍ
(১) পরকালের জন্য তুমি পাথেয় সঞ্চয় কর + এবং ইবাদতে দাঁড়াও আল্লাহর জন্যআর উত্তম পুঁজির জন্য কাজ কর। (২) দুনিয়ার জন্য বেশী সঞ্চয় করো না + কারণ মাল জমা করা হয় নিঃশেষ হওয়ার জন্য। (৩) তুমি কি চাও নেককার কওমের বন্ধু হতে? + যাদের পুঁজি রয়েছেঅথচ তুমি পুঁজিহীন।[25]
সৎকর্মের উপর মৃত্যুবরণ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِশেষ আমলের উপরেই পরিণাম নির্ধারিত হয়।[26] অতএব শেষ আমল যদি সুন্দর হয়, তবে সেটি হবে দুনিয়া থেকে সুন্দর বিদায়ের (حُسْنُ الْخَاتِمَة) লক্ষণআল্লাহর পথে জিহাদ করা যা সর্বোচ্চ আমল, আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া, দ্বীন শেখা ও শেখানো এগুলি নবীদের কাজআল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও বা মৃত্যুবরণ কর, তবে (মনে রেখ) তারা যা কিছু (দুনিয়ায়) সঞ্চয় করেছে, সবকিছুর চাইতে আল্লাহর ক্ষমা ও করুণা অবশ্যই উত্তম’ (আলে ইমরান ৩/১৫৭)অর্থাৎ আল্লাহর পথে যদি কেউ নিহত হয় বা মৃত্যুবরণ করে, সেটি হবে তার সুন্দর বিদায়ের নিদর্শনঅনুরূপভাবে আল্লাহর পথে হিজরত করা, দাওয়াতে বের হওয়া, হজ্জ বা ওমরায় গমন করা, আল্লাহর পথে কষ্ট ভোগ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা হল সর্বোত্তম মৃত্যু সমূহের অন্তর্ভুক্ত এতে আল্লাহর নিকট মহা পুরস্কার নিহিত রয়েছে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেযে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছিয়াম রাখে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেযে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছাদাক্বা করে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[27] আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللهِ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيمًاআর যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর মৃত্যু তাকে গ্রাস করে, তার প্রতিদানের ভার আল্লাহর উপর ন্যস্ত হয়েছেআর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নিসা ৪/১০০)
এতে প্রমাণিত হয় যে, নেক আমলের উপর মৃত্যুবরণ করা আখেরাতে মুক্তির শুভ লক্ষণ অতএব সর্বদা নেক আমলের মধ্যেই জীবন অতিবাহিত করা উচিতকেননা মৃত্যু যেকোন সময় এসে যেতে পারেআর সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা আত্মশুদ্ধির সবচেয়ে বড় উপায়
মৃত্যুর চিন্তা আল্লাহভীরুতা আনয়ন করে ও ঈমান বৃদ্ধি করে :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুমিনদের জানাযায় অংশগ্রহণ করতে বলেছেন এবং তাতে এক ক্বীরাত্ব তথা ওহোদ পাহাড়ের সম পরিমাণ নেকী ও দাফন শেষ করে ফিরে এলে তাতে দুই ক্বীরাত্ব সম পরিমাণ নেকীর কথা বলেছেন।[28] যাতে অন্যের জানাযা দেখে নিজের জানাযার কথা স্মরণ হয়অন্যের কবরে শোয়ানো দেখে নিজের কবরের কথা মনে হয়অন্যের অসহায় চেহারা দেখে নিজের মৃত্যুকালীন অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ হয়যাতে মানুষের অহংকার চুর্ণ হয় ও সে বিনয়ী হয়অতঃপর পরপারে যাত্রার প্রস্ত্ততি গ্রহণে তৎপর হয়তিনি কবরপূজার শিরকের কথা চিন্তা করে প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ করেছিলেনকিন্তু পরে অনুমতি দিয়ে বলেন, نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَاআমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলামকিন্তু এখন তোমরা যিয়ারত কর।[29] فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَকেননা এটি তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।[30] আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কতগুলি দাগ কাটলেনঅতঃপর বললেন, هَذَا الأَمَلُ وَهَذَا أَجَلُهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَهُ الْخَطُّ الأَقْرَبُএটি মানুষের আকাংখা ও এটি তার মৃত্যুএর মধ্যেই মানুষ চলতে থাকেএক সময় সে তার মৃত্যুর দাগের নিকটে এসে যায়।[31] ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার কাঁধ ধরে বললেন, كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍতুমি দুনিয়াতে বসবাস কর যেন তুমি একজন আগন্তুক বা একজন মুসাফিরইবনু ওমর (রাঃ) বলতেন, সন্ধ্যা এলে তুমি সকালের অপেক্ষা করো নাসকাল এলে তুমি সন্ধ্যার অপেক্ষা করো নাতুমি তোমার অসুখের পূর্বে সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার পূর্বে জীবনকে কাজে লাগাও।[32]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুমআর খুৎবাতে অধিকাংশ সময় সূরা ক্বাফ থেকে পাঠ করে শুনাতেনকেননা সেখানে রয়েছে মৃত্যু ও আখেরাতের বাস্তব বাণীচিত্র সমূহবিশেষ করে ২-৩, ১৬-৩০ পর্যন্ত আয়াতগুলিতন্মধ্যে ২২-২৫ চারটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি এই দিবস সম্পর্কে উদাসীন ছিলেএখন তোমার সম্মুখ হতে পর্দা সরিয়ে দিয়েছিঅতএব আজ তোমার দৃষ্টি প্রখরতার সঙ্গী ফেরেশতা বলবে, এই তো আমার নিকট তার আমলনামা প্রস্ত্তত‘(তখন আদেশ করা হবে) তোমরা উভয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর প্রত্যেক উদ্ধত অবিশ্বাসীকেকল্যাণ কর্মে বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে’ (ক্বাফ ৫০/২২-২৫)
নেককার ও বদকার প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং প্রত্যেকেই কাফন পরে কবরে যাবেকিন্তু সেখানে গিয়ে কেউ আগুনের খোরাক হবে এবং কেউ জান্নাতের সুবাতাস পেয়ে ধন্য হবেকেউ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত ভয়ংকর ফেরেশতার প্রচন্ড হাতুড়ি পেটা খাবে, কেউ জান্নাতের সুগন্ধিতে নববিবাহিতের ন্যায় সুখনিন্দ্রায় ঘুমিয়ে যাবেকারু কবর সংকীর্ণ হবে ও দুই পার্শ্ব চেপে ধরে তাকে পিষ্ট করবেকারু কবর প্রশস্ত ও আলোকিত হবেনিদ্রার মধ্যে দুঃস্বপ্নে মানুষ ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে বা আনন্দে হেসে ওঠেএটা যেমন সবাই বাস্তব বলে মেনে নিচ্ছেতাহলে চিরনিদ্রার জগতে এটা অসম্ভব হবে কেন? অতএব বুদ্ধিমান মানুষের সাবধান হওয়া উচিত
জ্ঞানী মানুষদের কিছু উক্তি :
(১) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কিভাবে সকাল করেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, এমন অবস্থায় যে, আমি ফিৎনাকে ভালবাসি ও হক-কে অপসন্দ করিবলা হ, সেটা কেমন? তিনি বললেন, আমি আমার সন্তানকে ভালবাসি ও মৃত্যুকে অপসন্দ করি [33] (২) ক্বায়েস বিন আবু হাযেম (মৃ. ৯৩ হি.) বনু উমাইয়াদের একজন খলীফার দরবারে গেলে তিনি বলেন, হে আবু হাযেম! আমাদের কি হল যে আমরা মৃত্যুকে অপসন্দ করছি? জওয়াবে তিনি বলেন, এটা এজন্য যে, আপনারা আপনাদের আখেরাতকে নষ্ট করেছেন ও দুনিয়াকে আবাদ করেছেনসেকারণ আপনারা আবাদী স্থান থেকে অনাবাদী স্থানে যেতে চান না।[34] (৩) হাসান বাছরী (২১-১১০ হি.) বলেন, হে আদম সন্তান! মুমিন ব্যক্তি সর্বদা ভীত অবস্থায় সকাল করে, যদিও সে সৎকর্মশীল হয়&a

কেননা সে সর্বদা দুটি ভয়ের মধ্যে থাকে। (ক) বিগত পাপ সমূহের ব্যাপারেসে জানেনা আল্লাহ সেগুলির বিষয়ে কি করবেন। (খ) মৃত্যুর ভয়, যা এখনো সামনে আছে সে জানেনা আল্লাহ তাকে তখন কোন পরীক্ষায় ফেলবেনঅতএব আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির উপরে, যে এগুলি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে ও জ্ঞান হাছিল করে দূরদর্শিতা লাভ করে এবং নিজেকে প্রবৃত্তি পরায়ণতা থেকে বিরত রাখে।[35] তিনি বলতেন, দুনিয়া তিনদিনের জন্যগতকাল, যে তার আমল নিয়ে চলে গেছে আগামীকাল, সেটা তুমি নাও পেতে পারআজকের দিন, এটি তোমার জন্যঅতএব তুমি এর মধ্যে আমল কর’ (পৃ. ৩৩)।[36] জনৈক ব্যক্তি তাকে কুশল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির অবস্থা কেমন থাকবে, যে সকাল-সন্ধ্যা মৃত্যুর প্রতীক্ষা করে? সে জানেনা আল্লাহ তার সাথে কি ব্যবহার করবেন’ (উক্তি ৪৯)।[37] তিনি যখন কোন জানাযা পড়াতেন, তখন কবরের মধ্যে উঁকি মেরে জোরে জোরে বলতেন, কত বড়ই না উপদেশদাতা সেযদি জীবিত অন্তরগুলি তার অনুগামী হত! (পৃ. ৫১-৫২)।[38] তাঁকে একদিন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আপনি কেমন আছেন? জবাবে তিনি বলেন, তুমি আমাকে আমার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ? আচ্ছা ঐ ব্যক্তিদের সম্পর্কে তোমার কি ধারণা যারা একটি নৌকায় চড়ে সাগরে গেছেঅতঃপর মাঝ দরিয়ায় গিয়ে তাদের নৌকা ভেঙ্গে গেছেতখন তারা যে যা পেয়েছে কাঠের টুকরা নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেলোকটি বলল, সেটা তো বড় ভয়ংকর অবস্থাহাসান বাছরী বললেন, আমার অবস্থা তার চাইতে কঠিন’ (উক্তি ১৭, পৃ. ২০)।[39] এতবড় একজন বিখ্যাত তাবেঈ, আবেদ, যাহেদ, দুনিয়াত্যাগী ব্যক্তির যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ ভেবে দেখা কর্তব্য
(৪) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হি.) একদিন বাগদাদের বাজারে এলেনঅতঃপর এক বোঝা কাঠ খরিদ করে কাঁধে নিয়ে চলতে শুরু করলেনঅতঃপর যখন লোকেরা তাকে চিনে ফেলল, তখন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে, দোকানদাররা দোকান ছেড়ে, পথিকরা পথ চলা বন্ধ করে তাঁর কাছে ছুটে এল ও সালাম দিয়ে বলতে লাগল, আমরা আপনার বোঝা বহন করবতখন তাঁর হাত কেঁপে উঠল, চেহারা লাল হয়ে গেল, দুচক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলঅতঃপর তিনি বারবার বলতে থাকলেন, আমরা মিসকীনযদি আল্লাহ আমাদের পাপ ঢেকে না দেন, আমরা অবশ্যই সেদিন লাঞ্ছিত হব’ (পৃ. ২১-২২)। (৫) মুহাম্মাদ বিন ওয়াসেবাছারী (মৃ. ১২৩ হি.)-কে জিজ্ঞেস করা হল কিভাবে আপনি সকাল করেছেন? জবাবে তিনি বললেন, ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা, যে ব্যক্তি প্রতিদিন পরকালের পথ পাড়ি দিচ্ছে? (উক্তি ২০)।[40] (৬) ছাহাবী আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, তিনজন লোককে দেখলে আমার হাসি পায়। (ক) দুনিয়ার আকাংখীঅথচ মৃত্যু তাকে খুঁজছে (খ) উদাসীন ব্যক্তিঅথচ আল্লাহ তার থেকে উদাসীন নন (গ) গাল ভরে হাস্যকারী ব্যক্তিঅথচ সে জানেনা আল্লাহ তার উপর খুশী না নাখোশ’ (পৃ. ২২)।[41] (৭) আসওয়াদ বিন সালেম (মৃ. ২১৪হি.)-কে বলা হল আপনি আজ কিভাবে সকাল করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, মন্দভাবেকেননা আজ একজন বিদআতীর প্রতি আমার দৃষ্টি পড়েছে’ (উক্তি ২২, পৃ. ২৩)। (৮) বিখ্যাত তাবেঈ ও কূফার বিচারপতি ক্বাযী শুরাইহ-কে জিজ্ঞেস করা হল আপনি আজ কিভাবে সকাল করলেনতিনি বললেন, এমন অবস্থায় যে, অর্ধেক মানুষ আমার উপর ভীষণ ক্রুদ্ধ’(أَصْبَحْتُ وَنِصْفُ النَّاسِ عَلَىَّ غِضَابٌ) (উক্তি ২৩, পৃ. ২৩-২৪)।[42]
(৯) ফুযায়েল বিন মাসঊদ (মৃ. ১৮৭ হি.)-কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আপনি কেমন আছেন? জওয়াবে তিনি বললেন, যদি তুমি আমার দুনিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর, তবে আমি বলব যে, দুনিয়া আমাদেরকে যেখানে খুশী নিয়ে চলেছেআর যদি আখেরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাক, তাহলে ঐ ব্যক্তির অবস্থা কি জানবে যার পাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ও নেক আমল কম হয়েছেযার বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ তার পরকালের জন্য পাথেয় সঞ্চিত হয়নিমৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি নেয়নি, তার জন্য বিনত হয়নি, তার জন্য পা বাড়ায়নি, তার জন্য আমলকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেনিঅথচ দুনিয়ার জন্য সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে’? (উক্তি ২৯, পৃ. ২৭)।[43]
(১০) আবু সুলায়মান দারানী (মৃ. ২১৫ হি.) স্বীয় উস্তায উম্মে হারূণকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ব্যক্তি কেমন থাকবে যার রূহ অন্যের হাতে’? (উক্তি ৪৫, পৃ. ৩৭)।[44] তিনি আরেকবার তাঁকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি মৃত্যুকে ভালবাসেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তির অবাধ্যতা করলে, তার সাক্ষাৎ পসন্দ করি নাতাহলে আমি কিভাবে আল্লাহর সাক্ষাৎ পসন্দ করব, অথচ আমি তার অবাধ্যতা করছি?[45] (১১) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হল আপনি কিভাবে সকাল করলেন? তিনি বললেন, সকালে আমি আমার রবের দেওয়া রূযী খাইআর আমি তার শত্রু ইবলীসের আনুগত্য করি’ (উক্তি ৫৭, পৃ. ৪২)।[46] (১২) আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর ভয়ে এক ফোঁটা অশ্রুপাত আমার নিকট এক হাযার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ছাদাক্বা করার চাইতে অধিক প্রিয়’ (পৃ. ২৮)।[47]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহর ছায়াতলে আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হল তারাই, যারা আল্লাহকে নির্জনে-নিরালায় স্মরণ করেঅতঃপর তাদের দুচোখ বেয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।[48] (১৩) রবীবিন খায়ছাম (মৃ. ৬৫ হি.) বাড়ীতে কবর খুঁড়ে রাখেনযেখানে তিনি দিনে একাধিকবার ঘুমাতেনযাতে সর্বদা মৃত্যুর কথা মনে পড়ে।[49] তিনি বলতেন, لَوْ فَارَقَ ذِكْرُ الْمَوْتِ قَلْبِي سَاعَةً فَسَدَ عَلِيَّযদি আমার অন্তর এক মুহূর্ত মৃত্যুর স্মরণ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে তা আমাকে বিনষ্ট করে দেয়।[50] (১৪) মুত্বার্রিফ বিন আব্দুল্লাহ (মৃ. ৯৫ হি.) বলেন, মৃত্যু সচ্ছল ব্যক্তির সুখ-সম্ভারকে কালিমালিপ্ত করে দেয়অতএব তুমি এমন সুখের সন্ধান কর, যেখানে কোন মৃত্যু নেই।[51] (১৫) ইব্রাহীম তায়মী (মৃ. ১২০ হি.) বলেন, দুটি বস্ত্ত আমার দুনিয়ার স্বাদ বিনষ্ট করেছেমৃত্যুর স্মরণ ও আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয়।[52] (১৬) কাব বলতেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে উপলব্ধি করে, দুনিয়ার বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা সমূহ তার নিকট হীন বস্ত্ত হয়ে যায়।[53] (১৭) ওমর বিন আব্দুল আযীয জনৈক আলেমকে বলেন, আপনি আমাকে উপদেশ দিনতিনি বললেন, আপনিই প্রথম খলীফা নন, যিনি মৃত্যুবরণ করবেনখলীফা বললেন, আরও উপদেশ দিনতিনি বললেন, আদম পর্যন্ত আপনার বাপ-দাদাদের এমন কেউ ছিলেন না যিনি মৃত্যুবরণ করেননি এবার আপনার পালাএকথা শুনে খলীফা কেঁদে ফেলেনতিনি প্রতি রাতে আলেম-ওলামাদের নিয়ে বৈঠক করতেনযেখানে মৃত্যু, ক্বিয়ামত ও আখেরাত নিয়ে আলোচনা হতখন তারা এমনভাবে ক্রন্দন করতেন, যেন তাদের সামনেই জানাযা উপস্থিত হয়েছে।[54] (১৮) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তি তার এক বন্ধুর নিকটে লেখেন, হে বন্ধু! ইহকালে মৃত্যুকে ভয় কর, পরকালে যাওয়ার আগেযেখানে তুমি মৃত্যু কামনা করবে, অথচ মৃত্যু হবে না।[55]
দ্রুত সৎকর্ম সম্পাদন : 
অতএব হে মানুষ! মৃত্যু আসার আগেই প্রস্ত্ততি গ্রহণ করোদুনিয়ার চাকচিক্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলো না অবিশ্বাসীদের ধোঁকায় পড়ো নাআল্লাহ বলেন, فَلا تَعْجَلْ عَلَيْهِمْ إِنَّمَا نَعُدُّ لَهُمْ عَدًّاতুমি তাদের বিষয়ে ব্যস্ত হয়ো নাআমরা তো তাদের জন্য নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময়কাল গণনা করছি’ (মারিয়াম ১৯/৮৪)অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের প্রতিটি নিঃশ্বাস গণনা করেনবান্দা কোন কাজে সেটি ব্যয় করছে, তার হিসাব রাখেনসে তার মৃত্যুর দিকে আলোর গতিতে প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কি.মি. বেগে এগিয়ে চলেছেঅতএব হে মানুষ! তুমি দ্রুত সৎকর্ম সম্পাদন করবলো না যে, কাজটি আমি আগামীকাল করবযেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেছেন,وَلاَ تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا- إِلاَّ أَنْ يَشَاءَ اللهُ... ‘আর তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ওটা আমি আগামীকাল করবযদি আল্লাহ চানবলা ব্যতিরেকে...’ (কাহফ ১৮/২৩-২৪)তিনি বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করআর প্রত্যেকে ভেবে দেখুক আগামীকালের (ক্বিয়ামতের) জন্য সে কি অগ্রিম পাঠিয়েছেতোমরা আল্লাহকে ভয় করনিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (হাশর ৫৯/১৮)আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের নিকট দায়বদ্ধ‘(আনুগত্যের কারণে) ডান সারির লোকেরা ব্যতীততারা জান্নাতে থাকবেতারা পরস্পরে জিজ্ঞেস করবে’- ‘পাপীদের বিষয়েকোন বস্ত্ত তোমাদেরকে সাক্বারে (জাহান্নামে) প্রবেশ করিয়েছে’? ‘তারা বলবে, আমরা মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম নাআমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম নাআমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনায় মগ্ন থাকতামআমরা বিচার দিবসকে মিথ্যা বলতামঅবশেষে আমাদের কাছে এসে গেল মৃত্যুফলে সুফারিশকারীদের সুফারিশ তাদের কোন কাজে আসবে নাঅতঃপর তাদের কি হল যে, তারা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়’? ‘তারা যেন পলায়নপর বন্য গাভীযে শিকারী সিংহ দেখে পালায়’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩৮-৫১)
ক্বিয়ামত দিবসে মানুষের অবস্থা :
আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবেকোনকিছু্ই তোমাদের গোপন থাকবে নাঅতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, এসো তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখ’! ‘আমি নিশ্চিত জানতাম যে, আমাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবেঅতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবেসুউচ্চ জান্নাতেযার ফলসমূহ নীচু হয়ে নিকটে আসবে‘(বলা হবে) তোমরা খুশীমনে খাও ও পান কর বিগত দিনে (দুনিয়াতে) যেসব সৎকর্ম করেছিলে তার প্রতিদানেঅতঃপর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! যদি আমাকে এ আমলনামা না দেওয়া হ’! ‘এবং আমি যদি আমার হিসাব না জানতাম’! ‘হায়, মৃত্যুই যদি আমার চূড়ান্ত পরিণতি হ’! ‘আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজে আসল নাআমার রাজনৈতিক ক্ষমতা বরবাদ হয়ে গেল‘(তখন ফেরেশতাদের বলা হবে) ধরো একেঅতঃপর বেড়ী পরাও একেঅতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ কর একেঅতঃপর সত্তুর হাত লম্বা শিকল দিয়ে শক্তভাবে বাঁধো একেসে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল নাসে অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে উৎসাহ প্রদান করত নাঅতএব আজকে এখানে তার কোন বন্ধু নেইআর তার জন্য কোন খাদ্য নেই দেহ নিঃসৃত পূঁজ-রক্ত ব্যতীতযা কেউ খাবে না পাপীরা ব্যতীত’ (হা-ক্কাহ ৬৯/১৮-৩৭)অতএব আসুন! আমরা মৃত্যুর আগেই সাবধান হইআল্লাহ আমাদেরকে তাঁর জান্নাতী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন!
[1]. হাকেম হা/৭৯২১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩১
[2]. তিরমিযী হা/২৩০৭; ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৮; নাসাঈ হা/১৮২৪; মিশকাত হা/১৬০৭
[3]. তিরমিযী হা/১০৭১; মিশকাত হা/১৩০ কবরের আযাবঅনুচ্ছেদ
[4]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৭২; মিশকাত হা/১৩৮
[5]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৮; মিশকাত হা/১৩৯
[6]. বুখারী হা/১৩৬৯; মুসলিম হা/২৮৭১; মিশকাত হা/১২৫
[7]. আবুদাঊদ হা/৪৭৫৩; মিশকাত হা/১৩১
[8]. বুখারী হা/১৩৭৪; মুসলিম হা/২৮৭০; মিশকাত হা/১২৬
[9]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৮; মিশকাত হা/১৩৯
[10]. আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; বুখারী হা/১৩৭৪; মিশকাত হা/১৩১, ১২৬
[11]. তিরমিযী হা/১০৭১; মিশকাত হা/১৩০
[12]. তিরমিযী হা/২৩০৮; ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৭; মিশকাত হা/১৩২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৫৫০
[13]. বুখারী হা/৪৭৭৯; মুসলিম হা/২৮২৫; মিশকাত হা/৫৬১২
[14]. বুখারী হা/৩২৫০; মিশকাত হা/৫৬১৩
[15]. নবীদের কাহিনী ২/৪৩-৪৪
[16]. মুসলিম হা/১৮১; মিশকাত হা/৫৬৫৬ আল্লাহকে দর্শনঅনুচ্ছেদ
[17]. বুখারী হা/৭৪৩৪; মুসলিম হা/৬৩৩; মিশকাত হা/৫৬৫৫
[18]. বুখারী হা/৬৩৪৮; মুসলিম হা/২৪৪৪; মিশকাত হা/৫৯৬৪; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৭৪৩ পৃ.
[19]. মুসলিম হা/২৯৫৬; মিশকাত হা/৫১৫৮
[20]. বুখারী হা/৬৫০৮; মুসলিম হা/২৬৮৩; মিশকাত হা/১৬০১
[21]. আহমাদ হা/১০৮৭৮; ছহীহাহ হা/৫৭৮
[22]. মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৪৪৫
[23]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯; ছহীহাহ হা/১৩৮৪
[24]. মুসলিম হা/৪২৬
[25]. কুরতুবী, আত-তাযকিরাহ বি আহওয়ালিল মাওতা ৩০৬ পৃ.
[26]. বুখারী হা/৬৬০৭; মিশকাত হা/৮৩
[27]. আহমাদ হা/২৩৩৭২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯৮৫
[28]. বুখারী হা/৪৭; মুসলিম হা/৯৪৫; মিশকাত হা/১৬৫১
[29]. মুসলিম হা/৯৭৭; মিশকাত হা/১৭৬২
[30]. মুসলিম হা/৯৭৬; মিশকাত হা/১৭৬৩
[31]. বুখারী হা/৬৪১৮; মিশকাত হা/৫২৬৯
[32]. বুখারী হা/৬৪১৬; মিশকাত হা/১৬০৪
[33]. আয়মান আশ-শাবান, কায়ফা আছবাহতা (রিয়ায : মাকতাবা কাওছার ১৪৩৫/২০১৪), উক্তি সংখ্যা ৯, ১২ পৃ.বইটিতে মোট ৮১টি উক্তি ও অন্যান্য উপদেশ রয়েছে
[34]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ২২/৩০
[35]. ইবনুল জাওযী, আদাবুল হাসান বাছরী, ১২৩ পৃ.
[36]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, আয-যুহদ, ১৯৭ পৃ.
[37]. ইবনু হিববান, রওযাতুল উকালা, ৩২ পৃ.
[38]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ক্বাছরুল আমাল, ১৪৫ পৃ.
[39]. আবুবকর আল-মারূযী, আখবারুশ শুয়ূখ ওয়া আখলাক্বিহিম ১৮৩ পৃ.
[40]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৫৬/১৬৯
[41]. ইবনুল মুবারক, আয-যুহুদ (বৈরূত) ৮৪ পৃ.
[42]. আল-খাত্ত্বাবী, গারীবুল হাদীছ ১/৫০৩
কূফার খ্যাতনামা ক্বাযী শুরাইহ ছিলেন ন্যায়বিচারক হিসাবে অদ্বিতীয়যামিন হওয়ার পর আসামী পালালে যামিনদার নিজের ছেলেকে তিনি জেলে পাঠান ও তার জন্য নিজে জেলখানায় খাবার নিয়ে যানক্ষুধার্ত ও রাগান্বিত হলে তিনি এজলাস থেকে উঠে যেতেনএকবার একজনকে চাবুক মারলে পরে ভুল বুঝতে পেরে তিনি নিজের পিঠ পেতে দিয়ে তার কাছ থেকে ক্বিছাছ নিয়ে নেন’ (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ৬/১৩১-১৪৪)সৈয়ূতী বর্ণনা করেন, ক্বাযী শুরাইহ বিন হারিছ বিন ক্বায়েস আল-কিন্দী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগ পেয়েছিলেনকিন্তু তাঁর সাথে সাক্ষাৎ ঘটেনিতিনি হযরত ওমর, ওছমান, আলী ও মুআবিয়া (রাঃ) সহ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ-এর যুগ (৭৬-৯৬ হি.) পর্যন্ত একটানা ৬০ বছর বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেনতিনি ১২০ বছর বেঁচেছিলেনমৃত্যুর একবছর পূর্বে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি নেনতাঁর মৃত্যুর সন বিষয়ে ৭৮ হি., ৮০, ৮২, ৮৭, ৯৩, ৯৬, ৯৭ ও ৯৯ বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে (সৈয়ূতী, ত্বাবাক্বাতুল হুফ্ফায (কায়রো ১৩৯২/১৯৭৩) ক্রমিক সংখ্যা ৪২, পৃঃ ২০)
[43]. আবু নুআইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৮/৮৫-৮৬
[44]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৭০/২৬৬
[45]. আবু হামেদ আল-গাযালী, এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯
[46]. , ৩/১৬৮
[47]. বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান হা/৮৪২
[48]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১
[49]. এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯
[50]. আবু নুআইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/১১৬
[51]. এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯
[52]. , ৭/১৩৮
[53]. , ৭/১৩৮
[54]. , ৭/১৩৯
[55]. , ৭/১৩৮
মৃত্যুকে স্মরণ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ : جَاءَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا مُحَمَّدُ، عِشْ مَا شِئْتَ فَإِنَّكَ مَيِّتٌ، وَأَحْبِبْ مَنْ أَحْبَبْتَ فَإِنَّكَ مَفَارِقُهُ، وَاعْمَلْ مَا شِئْتَ فَإِنَّكَ مَجْزِيٌّ بِهِ. ثُمَّ قَالَ : يَا مُحَمَّدُ شَرَفُ الْمُؤْمِنِ قِيَامُ اللَّيْلِ وَعِزُّهُ اسْتِغْنَاؤُهُ عَنِ النَّاسِِ- رواه الحاكم بإسناد صحيح অনুবাদ : সাহল বিন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জিব্রীল এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যতদিন খুশী জীবন যাপন কর কিন্তু মনে রেখ তুমি মৃত্যুবরণ করবেযার সাথে খুশী বন্ধুত্ব করকিন্তু মনে রেখ তুমি তাকে ছেড়ে যাবেযা খুশী তুমি আমল করকিন্তু মনে রেখ তুমি তার ফলাফল পাবেজেনে রেখ, মুমিনের মর্যাদা হল ইবাদতে রাত্রি জাগরণে এবং তার সম্মান হল মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যে।[1] আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন, إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَনিশ্চয়ই তুমি মরবে এবং তারাও মরবে’ (যুমার ৩৯/৩০)বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে আল্লাহ নিজে এবং জিব্রীলকে পাঠিয়ে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনঅতএব মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া দুটিই মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্যকেননা দুনিয়ায় লিপ্ত মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়এই ফাঁকে শয়তান তাকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে নেয়একারণেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِতোমরা বেশী বেশী করে স্বাদ বিনষ্টকারী বস্ত্তটির কথা স্মরণ কর।[2] অর্থাৎ মৃত্যুকে স্মরণ করযাতে দুনিয়ার আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং আল্লাহর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়সেই সাথে তার দীদার লাভের জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয় মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী : প্রাণী মাত্রই মরবেজন্ম ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িতদুটির কোনটির ক্ষমতা মানুষের হাতে নেইআল্লাহর হুকুমেই জন্ম হয়আল্লাহর হুকুমেই মৃত্যু হয়কখন হবে, কোথায় হবে, কিভাবে হবে, তা কারো জানা নেইজীবনের সুইচ তাঁরই হাতে, যিনি জীবন দান করেছেনঅতঃপর জীবনদাতার সামনে হাযিরা দিয়ে জীবনের পূর্ণ হিসাব পেশ করতে হবেহিসাব শেষে জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে ও সেখানেই চিরকাল শান্তিতে বাস করবে অথবা শাস্তি ভোগ করবেআল্লাহ বলেন,كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ- ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবেঅতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে ব্যক্তি সফলকাম হবেবস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)দুনিয়ার এ চাকচিক্যে আমরা পরকালকে ভুলে যাইঅথচ নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল শেষে আমাদের সেখানে যেতেই হবেকেউ আমাকে জগত সংসারে ধরে রাখতে পারবে নাআল্লাহ বলেন,وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلاًّ...- ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে নাসেজন্য একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে...’ (আলে ইমরান ৩/১৪৫)তিনি বলেন, ...وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ‘...আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবেনিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লোকমান ৩১/৩৪)তিনি আরও বলেন, ...فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ- ‘...অতঃপর যখন সেই সময়কাল এসে যায়, তখন তারা সেখান থেকে এক মুহূর্ত আগপিছ করতে পারে না’ (নাহল ১৬/৬১)দুনিয়ার পাগলেরা সুদৃঢ় ও সুউচ্চ প্রাসাদসমূহ নির্মাণ করেঅথচ তাকে চলে যেতে হবে সব ছেড়ে মাটির গর্তেযেখানে তার নীচে, উপরে, ডাইনে ও বামে থাকবে স্রেফ মাটিযা থেকে সে সারা জীবন গা বাঁচিয়ে চলেছেঅথচ আল্লাহ বলেন,أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍযেখানেই তোমরা থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেইএমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান কর’ (নিসা ৪/৭৮)কবি বলেন, أَلاَ يَا سَاكِنَ الْقَصْرِ الْمُعَلَّى + سَتُدْفَنُ عَنْ قَرِيْبٍ فِى التُّرَابِ قَلِيْلُ عُمْرُنَا فِي دَارِ دُنْيَا + وَمَرْجَعُنَا إِلَى بَيْتِ التُّرَابِ (১) শোন হে সুউচ্চ প্রাসাদে বসবাসকারী! + সত্বর তুমি দাফন হবে মাটিতে (২) ইহকালে আমরা আমাদের জীবনের অল্প সময়ই কাটিয়ে থাকি + আর আমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল হল মাটির ঘরে (কবরে) কবরের অবস্থা : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাইয়েতকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন তার কাছে নীলচক্ষু বিশিষ্ট দুজন ঘোর কৃষ্ণকায় ফেরেশতা আসেন যাদের একজনকে মুনকারও অন্যজনকে নাকীরবলা হয়তারা এসে বলেন, তুমি এ ব্যক্তি সম্পর্কে দুনিয়াতে কি বলতে? তখন সে যদি নেককার হয়, তাহলে বলবে, ইনি হলেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূলআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূলতখন তারা বলবেন, আমরা জানতাম তুমি একথাই বলবেঅতঃপর তার জন্য তার কবরকে দৈর্ঘে-প্রস্থে সত্তুর হাত করে প্রশস্ত করা হবে এবং সেটিকে আলোকময় করা হবেঅতঃপর বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে যাওসে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে যাব এবং তাদেরকে এই সুসংবাদ জানাবতখন ফেরেশতাদ্বয় বলবেন, ঘুমিয়ে যাও বাসর রাতের ঘুমের ন্যায় যে ঘুম কেউ ভাঙ্গাতে পারে না প্রিয়তম ব্যক্তি ব্যতীতযতদিন না আল্লাহ তাকে তার শয্যাস্থান থেকে উঠাবেন।[3] জাবের (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, সে সূর্য অস্ত যেতে দেখবে এবং উঠে বসে চোখ মুছে বলবে, دَعُونِى أُصَلِّىছাড় আমি এখন (আছরের) ছালাত আদায় করব।[4] হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, তাকে উঠিয়ে বসানো হবে ভয়হীন ও দ্বিধাহীন চিত্তেঅতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কোন দ্বীনের উপর ছিলে? সে বলবে, ইসলামঅতঃপর বলা হবে, এই ব্যক্তি কে? সে বলবে, মুহাম্মাদ, যিনি আল্লাহর রাসূলযিনি আমাদের নিকটে আল্লাহর পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণাদি সহ এসেছিলেনঅতঃপর আমরা তাঁকে সত্য বলে জেনেছিলামতখন বলা হবে, তুমি কি আল্লাহকে দেখেছ? সে বলবে, কারু পক্ষে দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয় অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবেতখন সে সেখানকার ভয়ংকর দৃশ্য দেখবে যে, আগুনের ফুলকি সমূহ একে অপরকে দলিত-মথিত করছেএসময় তাকে বলা হবে, দেখ কি বস্ত্ত থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেনঅতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং সে জান্নাতের সুখ-সম্ভার দেখতে থাকবেতখন তাকে বলা হবে এটাই তোমার ঠিকানাতুমি দৃঢ় বিশ্বাসের উপরে ছিলেউক্ত বিশ্বাসের উপরেই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ এবং আল্লাহ চাহেন তো তার উপরেই তুমি পুনরুত্থিত হবে।[5] বারা বিন আযেব (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ফেরেশতাদ্বয় তাকে বসাবেনঅতঃপর জিজ্ঞেস করবেন, তোমার রব কে? সে বলবে, আমার রব আল্লাহতারা বলবেন, তোমার দ্বীন কি? সে বলবে, আমার দ্বীন ইসলামতারা বলবেন, এই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল? সে বলবে, ইনি আল্লাহর রাসূলতারা বলবেন, কিভাবে তুমি এটা জানলে? সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছি ও তাঁকে সত্য বলে জেনেছিবস্ত্ততঃ এটাই হল আল্লাহর কালামের বাস্তবতা, যেখানে তিনি বলেছেন,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِينَআল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্য দ্বারা মযবূত রাখেন ইহকালে ও পরকালে এবং যালেমদের পথভ্রষ্ট করেন’ (ইবরাহীম ১৪/২৭)একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন যে, উক্ত আয়াতটি কবরের আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।[6] অতঃপর আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দিবেন যে, আমার বান্দা সত্য কথা বলেছেসুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাওতাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও ও তার দিকে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাওঅতঃপর সেটি খুলে দেওয়া হবেফলে তার দিকে জান্নাতের সুবাতাস ও সুগন্ধি আসতে থাকবেআর ঐ দরজাটি তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রসারিত করা হবে।[7] আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাইয়েতকে দাফন শেষে যখন তার পরিবারবর্গ ও সঙ্গীসাথীরা ফিরে যায় এবং তাদের জুতার আওয়ায মাইয়েত অবশ্যই শুনতে থাকে, তখন দুজন ফেরেশতা আসেন ও তাকে উঠিয়ে বসান।... অতঃপর যদি সে মুনাফিক ও কাফের হয়, তখন তাকে এই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলবে, আমি জানি নালোকেরা যা বলত, আমিও তাই বলতামতাকে বলা হবে, তুমি তোমার জ্ঞান দিয়েও বুঝনিপাঠ করেও জানতে চেষ্টা করোনি...।[8] এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কবরে মাইয়েতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুনর্জীবিত করা হবেএই কবর মাটিতে হৌক বা অন্যত্র হৌককেননা কবর অর্থ মৃত্যুর পরবর্তী বরযখী জীবনযা দৃশ্যমান জগতের অন্তরালে থাকে (মিরআত ১/২১৭, ২২০) আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, অতঃপর সে যদি মন্দ লোক হয়, তাহলে তাকে বসানো হবে ভীত সন্ত্রস্ত ও দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায়বলা হবে তুমি কোন দ্বীনের উপরে ছিলে? সে বলবে, আমি জানি নাবলা হবে, এই ব্যক্তি কে? সে বলবে, লোকদের যা বলতে শুনেছি তাই বলতামঅতঃপর তাকে জান্নাতের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবেতখন সে তার সুখ-সম্ভার দেখতে থাকবেবলা হবে, তুমি দেখ যা তোমার থেকে আল্লাহ ফিরিয়ে নিয়েছেনঅতঃপর তাকে জাহান্নামের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবেসে সেখানকার আগুনের ফুলকি সমূহ দেখবে, যা একে অপরকে দলিত-মথিত করছেতখন তাকে বলা হবে, এটাই তোমার ঠিকানাযে বিষয়ে তুমি সন্দেহের উপরে ছিলে এবং সন্দেহের উপরেই তুমি মরেছআর এই সন্দেহের উপরেই আল্লাহ চাইলে তুমি পুনরুত্থিত হবে।[9] বারা বিন আযেব (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, সে তিনটি প্রশ্নেই বলবে, হায় হায় আমি জানি নাতখন আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দিয়ে বলবেন, সে মিথ্যা বলেছে অতএব তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাওজাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের দিকের একটি দরজা খুলে দাওঅতঃপর সেখান থেকে প্রচন্ড গরম লু হাওয়া তার কবরে প্রবাহিত হবেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর তার কবরকে তার উপর এমন সংকীর্ণ করা হবে যে, প্রচন্ড চাপে একদিকের পাঁজর অন্যদিকে প্রবেশ করবেঅতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে লোহার বড় হাতুড়ি সহ নিযুক্ত করা হবে, যদি ঐ হাতুড়ি পাহাড়ের উপরে মারা হ, তাহলে তা মাটি হয়ে যেতঅতঃপর সে তাকে মারতে থাকবেএসময় তার বিকট চিৎকার জ্বিন-ইনসান ব্যতীত পূর্ব ও পশ্চিমের সকল সৃষ্টিজগত শুনতে পাবেঅতঃপর সে মাটি হয়ে যাবে, আবার বেঁচে উঠবে।[10] অন্য বর্ণনায় এসেছে, এভাবেই সে শাস্তি পেতে থাকবে, যতদিন না আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান দিবসে তার শয্যাস্থান থেকে উঠান।[11] মৃত্যু চিন্তা মানুষকে আল্লাহভীরু ও সৎকর্মশীল বানায় : হযরত ওছমান গণী (রাঃ) কবরস্থানে গিয়ে কাঁদতেনযাতে দাড়ি ভিজে যেততাঁকে বলা হল জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনে আপনি কাঁদেন না, অথচ কবরে এসে কাঁদেন? জবাবে তিনি বলেন, কবর হল আখেরাতের প্রথম মনযিলযদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তাহলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য সহজ হয়ে যায়আর এখানে মুক্তি না পেলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েঅতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, কবরের চাইতে ভীতিকর দৃশ্য আমি আর দেখিনি।[12] কবর হল নিঃসঙ্গ জগতসমাজ ও সংসারের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানে একাকী জীবন কাটাতে হবেবাইরের কেউ সেখানকার অবস্থা জানাবে না বা তিনিও বাইরের কাউকে তার অবস্থা জানাতে পারবেন নাকেউ তার কোন উপকার করতে পারবে না বা তিনিও কারু কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারবেন নাকেননা তিনি থাকবেন দুনিয়ার অন্তরালেআল্লাহ বলেন, وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَআর তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/১০০)তিনি স্বীয় নবীকে বলেন,إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلاَ تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَনিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃত ব্যক্তিকে এবং শুনাতে পারো না কোন বধিরকে, যখন তারা পিঠ ফিরে চলে যায়’ (নমল ২৭/৮০)তিনি আরও বলেন, وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِআর যে কবরে আছে তাকে তুমি শুনাতে পারো না’ (ফাত্বির ৩৫/২২) বাড়ী-গাড়ী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, ভক্তকুল সবাইকে রেখে সবকিছু ছেড়ে কেবল এক টুকরো কাফনের কাপড় সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করতে হবেবিলাসিতায় কাটানো সুন্দর দেহটা পোকার খোরাক হবেজীবনের সকল আশা ও আকাংখা মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবেসকল হাসি সেদিন কান্নায় পরিণত হবেমানুষ তাই মরতে চায় নাসর্বদা সে মৃত্যু থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়অথচ আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلاَقِيكُمْ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَতুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা অবশ্যই তোমাদের কাছে উপস্থিত হবেঅতঃপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেই সত্তার কাছে, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছু সম্পর্কে অবগত অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন’ (জুম ৬২/৮) সে সময় মানুষ বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যদি তুমি আমাকে আরও কিছু দিনের জন্য সময় দিতে, তাহলে আমি ছাদাক্বা করে আসতাম ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত তামঅথচ নির্ধারিত সময়কাল যখন এসে যাবে, তখন আল্লাহ কাউকে আর অবকাশ দিবেন নাবস্ত্ততঃ তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (মুনাফিকূন ৬৩/১০-১১)অন্য আয়াতে এসেছে, ‘অবশেষে যখন তাদের কারু কাছে মৃত্যু এসে যায়, তখন সে বলে হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) ফেরত পাঠানযাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি করিনিকখনই নয়এটা তো তার একটি (বৃথা) উক্তি মাত্র যা সে বলে...’ (মুমিনূন ২৩/৯৯-১০০) আল্লাহর দীদার কামনা : আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সর্বদা আল্লাহর দীদার লাভের জন্য উন্মুখ থাকে কেননা সেখানে যে পুরস্কার সমূহ লুকিয়ে রয়েছে, তার কোন তুলনা নেইহাদীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ. قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ (فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِىَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ) ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সুখ-সম্ভার প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শুনেনি, মানুষের হৃদয় কখনো কল্পনা করেনিরাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ বিষয়ে তোমরা চাইলে পাঠ কর, ‘কেউ জানেনা তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী কি কি বস্ত্ত লুক্কায়িত রয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ’ (সাজদাহ ৩২/১৭)।[13] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জান্নাতের একটি চাবুক রাখার স্থান সমস্ত দুনিয়া ও তার মধ্যস্থিত সকল নেমত থেকে উত্তম।[14] প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি আল্লাহকে চিনেন, তিনি সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করেনকেননা মৃত্যু হল প্রধান ফটকযেটি উন্মোচিত হলেই আখেরাতের সুখ-শান্তির দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়বনু ইস্রাঈলের হাবীব নাজ্জারকে যখন তার অবিশ্বাসী কওম হত্যা করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, তখন তিনি সেখানে গিয়ে বলেন, يَالَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ- بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَহায় আমার কওম যদি জানতো’! ‘একথা যে, আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন’ (ইয়াসীন ৩৬/২৬-২৭)ঈমান কবুলকারী জাদুকরদের হুমকি দিয়ে ফেরাঊন যখন বলেছিল, ‘শীঘ্রই তোমরা তোমাদের পরিণতি জানতে পারবেআমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াবজবাবে জাদুকররা বলেছিল,لاَ ضَيْرَ إِنَّا إِلَى رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ- إِنَّا نَطْمَعُ أَن يَّغْفِرَ لَنَا رَبُّنَا خَطَايَانَا أَنْ كُنَّا أَوَّلَ الْمُؤْمِنِينَকোন ক্ষতি নেইআমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবআশা করি আমাদের প্রতিপালক আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেনকেননা আমরা (ক্বিবতীদের মধ্যে) ঈমান আনয়নকারীদের অগ্রগামী’ (শোআরা ২৬/৪৯-৫১)।[15] অন্যদিকে জাদুকরদের মুকাবিলায় মূসা ও হারূণের বিজয়ের খবর শুনে ফেরাঊনের নেককার স্ত্রী ও মূসার পালক মাতা আসিয়া আল্লাহর উপরে ঈমান ঘোষণা করেনতখন ফেরাঊন তাকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করেএসময় আসিয়া আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে বলেন, رَبِّ ابْنِ لِي عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَহে আমার পালনকর্তা! তোমার নিকটে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর! আমাকে ফেরাঊন ও তার পারিষদবর্গের হাত থেকে উদ্ধার কর এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দাও’ (তাহরীম ৬৬/১১) আল্লাহকে দর্শন : প্রকৃত ঈমানদারগণ সর্বদা আল্লাহর দর্শন কামনা করেনসেকারণ দুনিয়ার চাইতে আখেরাত তাদের নিকট সর্বাধিক কাম্যতাই মৃত্যুর পর্দা উন্মোচিত হলেই সে দেখতে পায় এক আনন্দময় জগতঅতঃপর জান্নাতে যখন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ স্বীয় নূরের পর্দা সরিয়ে দিয়ে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করবেন ও সে তাঁর দিকে তাকাবে, তখন সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেএর চাইতে আনন্দঘন মুহূর্ত তার জন্য আর হবে না।[16] সেদিন আল্লাহকে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে রাত্রির মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়।[17] বস্ত্ততঃ এটাই হল তার জন্য সর্বাধিক প্রিয় মুহূর্তআর সেকারণেই আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) মৃত্যুর প্রাক্কালে কেবলই বলেছিলেন, اللَّهُمَّ الرَّفِيْقَ الْأَعْلَيহে আল্লাহ! হে সর্বোচ্চ বন্ধু’! আর এটাই ছিল তাঁর শেষ কথাআয়েশা (রাঃ) বলেন, এর দ্বারা আমি বুঝলাম, এখন তিনি আর আমাদের পসন্দ করবেন না।[18] বস্ত্ততঃ দুনিয়াদাররা দুনিয়া ছাড়তে চায় নাতারা এখানকার ক্ষণস্থায়ী আরাম-আয়েশ থেকে বের হতে চায় নাপক্ষান্তরে ঈমানদারগণ দুনিয়ার চাইতে আখেরাতকে ভালবাসেনতারা এখানকার কষ্ট-মুছীবতকে হাসিমুখে বরণ করেন আখেরাতে চিরস্থায়ী শান্তি লাভের জন্যএ কারণেই বলা হয়েছে, দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার ও কাফেরের জন্য জান্নাত।[19] আর তাই মুমিন দ্রুত দুনিয়া ছেড়ে আখেরাতে যেতে চায় তার প্রিয়তমের সাক্ষাৎ লাভের জন্যঠিক যেমন কারাবন্দী বা প্রবাসী ব্যক্তি পাগলপারা হয়ে ছুটে আসে তার প্রিয়তম সাথী ও পরিবারের কাছে এখানে মৃত্যু কামনা নয়বরং প্রিয়তমের দীদার কামনাই মুখ্যতাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُযে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে অপসন্দ করে, আল্লাহ তার সাক্ষাতকে অপসন্দ করেন।[20] ফলে আল্লাহ যে কাজ পসন্দ করেন, মুমিন সর্বদা সে কাজেই লিপ্ত থাকেযে কাজ তিনি পসন্দ করেন না, মুমিন তা কখনই করে নাযদিও শয়তান তাকে সে কাজ করার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করেআল্লাহ বলেন, ...فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘...অতএব যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করেসে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১৮/১১০)অর্থাৎ লোক দেখানো বা শুনানোর জন্য নয়, বরং খালেছ অন্তরে স্রেফ আল্লাহকে রাযী-খুশী করার জন্য ইবাদত করেনইলে সেটা শিরক হবে যার পাপ আল্লাহ ক্ষমা করেন না’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)আল্লাহ শিরককারীর জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন’ (মায়েদাহ ৫/৭২)মোটকথা নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাস ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সৎকর্মই পরকালে আল্লাহর দীদার লাভের একমাত্র উপায় মুমিন যতদিন দুনিয়ায় থাকে, ততদিন সে তার জান-মাল-সময়-শ্রম সবকিছু ব্যয় করে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের জন্যযেন খুশীমনে তার প্রতিপালকের সামনে নেকীর ডালি নিয়ে হাযির হতে পারেঅন্যদিকে তার প্রতিপালক তাকে খুশী হয়ে পুরস্কারের ডালি ভরে দেনআল্লাহ বলেন,وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَআর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবেঅতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)বস্ত্ততঃ এটিই ছিল বান্দার প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ বাণীক্বিয়ামতের দিন দয়াময় প্রতিপালকসালামদিয়ে মুমিনদের সম্ভাষণ জানাবেন’ (ইয়াসীন ৩৬/৫৮) পাপ-পঙ্কিলতায় ভরা এ পৃথিবীকে মুমিন তার জন্য পরীক্ষাস্থল মনে করেআল্লাহ তাকে পরীক্ষার জন্য যতদিন চাইবেন, ততদিন সে এখানে থাকবে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের সাথে, সর্বোচ্চ নেকী সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যেমাঝে-মধ্যে আল্লাহ তার বান্দাকে কঠিন বিপদে ফেলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন, তাকে সাবধান করার জন্য যাতে সে আবার পূর্ণোদ্যমে নেকী অর্জনে লিপ্ত হয়জান্নাতের সর্বোচ্চতাসনীমঝর্ণা লাভের জন্য সে প্রতিযোগিতা করেআল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের চেহারাসমূহে স্বাচ্ছন্দ্যের প্রফুল্লতা দেখতে পাবেতাদেরকে মোহরাংকিত বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবেতার মোহর হবে মিশকেরআর এরূপ বিষয়েই প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিতআর তাতে মিশ্রণ থাকবে তাসনীমেরএটি একটি ঝর্ণা, যা থেকে পান করবে নৈকট্যশীলগণ’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/২৪-২৮) নিঃসন্দেহে আল্লাহর দীদার কেবল জান্নাতীরাই লাভ করবে, জাহান্নামীরা নয় আল্লাহ বলেন,كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ- ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيمِকখনই নাতারা সেদিন তাদের প্রতিপালকের দর্শন হতে বঞ্চিত থাকবেঅতঃপর তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৫-১৬) মৃত্যু কামনা নয় : অনেক মানুষ মৃত্যু কামনা করেকিন্তু তাতে আল্লাহর দীদার লাভের প্রেরণা থাকে নাঐ মৃত্যু তার জন্য ক্ষতির লক্ষণসেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِى مَكَانَهُ. مَا بِهِ حُبُّ لِقَاءِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّঅতদিন ক্বিয়ামত হবে না, যতদিন না কোন ব্যক্তি কারু কবরের পাশ দিয়ে যাবে এবং বলবে, হায় যদি আমি তোমার স্থানে হতাম! অথচ তার মধ্যে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের আকাংখা থাকবে না।[21] অন্য বর্ণনায় এসেছে, لَيْسَ بِهِ الدِّينُ إِلاَّ الْبَلاَءُতার মধ্যে দ্বীন থাকবে না বিপদের ভয় ব্যতীত।[22] অর্থাৎ আল্লাহর দীদার লাভের জন্য সে মৃত্যু কামনা করবে না বরং দুনিয়ার কষ্ট থেকে রেহাই পাবার জন্য সে মৃত্যু কামনা করবেএরূপ মৃত্যু আদৌ কাম্য নয় পরকালের পাথেয় সঞ্চয় : প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই যে দুনিয়াকে পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেযেদিন তার সাথে কেউ থাকবে না তার আমল ব্যতীতযা যথাযথভাবে না থাকলে লজ্জিত হতে হবেইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, কোন মুমিন উত্তম? তিনি বললেন, যে সর্বোত্তম চরিত্রবানলোকটি বলল, কে সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُমৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণকারী এবং তার পরবর্তী জীবনের জন্য সর্বাঙ্গীন সুন্দর প্রস্ত্ততি গ্রহণকারীতারাই হল প্রকৃত জ্ঞানী।[23] এর কারণ এই যে, মৃত্যু পরবর্তী অদৃশ্য জীবন সম্পর্কে তিনিই ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী এবং মানব জগতের মধ্যে তিনিই হলেন একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীযা মিরাজের রাত্রিতে আল্লাহ তাকে দেখিয়েছেন আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন ছালাত শেষে রাসূল (ছাঃ) আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমামঅতএব রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরানোর ব্যাপারে তোমরা আমার আগে বেড়ো নাকারণ আমি আমার সম্মুখে ও পিছনে দেখতে পাইযার হাতে আমার জীবন, তার কসম করে বলছি, যদি তোমরা দেখতে যা আমি দেখেছি, তাহলে অবশ্যই তোমরা হাসতে কম ও কাঁদতে বেশীলোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি দেখেছেন? তিনি বললেন, জান্নাত ও জাহান্নাম।[24] অতএব জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের প্রবল আকাংখা নিয়েই সৎকর্ম করতে হবে কবি বলেন, تَزَوَّدْ مِنْ مَعَاشِكْ لِلْمَعَادِ + وَقُمْ لِلَّهِ وَاعْمَلْ خَيْرَ زَادٍ وَلاَ تَجْمَعْ مِنَ الدُّنْيَا كَثِيْرًا + فَإِنَّ الْمَالَ يُجْمَعُ لِلنَّفَادِ أَتَرْضَى أَنْ تَكُوْنَ رَفِيْقَ قَوْمٍ + لَهُمْ زَادُ وَأَنْتَ بِغَيْرِ زَادٍ (১) পরকালের জন্য তুমি পাথেয় সঞ্চয় কর + এবং ইবাদতে দাঁড়াও আল্লাহর জন্য আর উত্তম পুঁজির জন্য কাজ কর। (২) দুনিয়ার জন্য বেশী সঞ্চয় করো না + কারণ মাল জমা করা হয় নিঃশেষ হওয়ার জন্য। (৩) তুমি কি চাও নেককার কওমের বন্ধু তে? + যাদের পুঁজি রয়েছেঅথচ তুমি পুঁজিহীন।[25] সৎকর্মের উপর মৃত্যুবরণ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِশেষ আমলের উপরেই পরিণাম নির্ধারিত হয়।[26] অতএব শেষ আমল যদি সুন্দর হয়, তবে সেটি হবে দুনিয়া থেকে সুন্দর বিদায়ের (حُسْنُ الْخَاتِمَة) লক্ষণআল্লাহর পথে জিহাদ করা যা সর্বোচ্চ আমল, আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া, দ্বীন শেখা ও শেখানো এগুলি নবীদের কাজআল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও বা মৃত্যুবরণ কর, তবে (মনে রেখ) তারা যা কিছু (দুনিয়ায়) সঞ্চয় করেছে, সবকিছুর চাইতে আল্লাহর ক্ষমা ও করুণা অবশ্যই উত্তম’ (আলে ইমরান ৩/১৫৭)অর্থাৎ আল্লাহর পথে যদি কেউ নিহত হয় বা মৃত্যুবরণ করে, সেটি হবে তার সুন্দর বিদায়ের নিদর্শনঅনুরূপভাবে আল্লাহর পথে হিজরত করা, দাওয়াতে বের হওয়া, হজ্জ বা ওমরায় গমন করা, আল্লাহর পথে কষ্ট ভোগ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা ল সর্বোত্তম মৃত্যু সমূহের অন্তর্ভুক্তএতে আল্লাহর নিকট মহা পুরস্কার নিহিত রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেযে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছিয়াম রাখে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেযে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছাদাক্বা করে ও তার উপরেই জীবন শেষ হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[27] আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللهِ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيمًاআর যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর মৃত্যু তাকে গ্রাস করে, তার প্রতিদানের ভার আল্লাহর উপর ন্যস্ত হয়েছেআর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নিসা ৪/১০০) এতে প্রমাণিত হয় যে, নেক আমলের উপর মৃত্যুবরণ করা আখেরাতে মুক্তির শুভ লক্ষণঅতএব সর্বদা নেক আমলের মধ্যেই জীবন অতিবাহিত করা উচিতকেননা মৃত্যু যেকোন সময় এসে যেতে পারেআর সর্বদা মৃত্যুকে স্মরণ করা আত্মশুদ্ধির সবচেয়ে বড় উপায় মৃত্যুর চিন্তা আল্লাহভীরুতা আনয়ন করে ও ঈমান বৃদ্ধি করে : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুমিনদের জানাযায় অংশগ্রহণ করতে বলেছেন এবং তাতে এক ক্বীরাত্ব তথা ওহোদ পাহাড়ের সম পরিমাণ নেকী ও দাফন শেষ করে ফিরে এলে তাতে দুই ক্বীরাত্ব সম পরিমাণ নেকীর কথা বলেছেন।[28] যাতে অন্যের জানাযা দেখে নিজের জানাযার কথা স্মরণ হয়অন্যের কবরে শোয়ানো দেখে নিজের কবরের কথা মনে হয়অন্যের অসহায় চেহারা দেখে নিজের মৃত্যুকালীন অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ হয়যাতে মানুষের অহংকার চুর্ণ হয় ও সে বিনয়ী হয়অতঃপর পরপারে যাত্রার প্রস্ত্ততি গ্রহণে তৎপর হয়তিনি কবরপূজার শিরকের কথা চিন্তা করে প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ করেছিলেনকিন্তু পরে অনুমতি দিয়ে বলেন, نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَاআমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলামকিন্তু এখন তোমরা যিয়ারত কর।[29] فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَকেননা এটি তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।[30] আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কতগুলি দাগ কাটলেনঅতঃপর বললেন, هَذَا الأَمَلُ وَهَذَا أَجَلُهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَهُ الْخَطُّ الأَقْرَبُএটি মানুষের আকাংখা ও এটি তার মৃত্যুএর মধ্যেই মানুষ চলতে থাকেএক সময় সে তার মৃত্যুর দাগের নিকটে এসে যায়।[31] ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার কাঁধ ধরে বললেন, كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍতুমি দুনিয়াতে বসবাস কর যেন তুমি একজন আগন্তুক বা একজন মুসাফিরইবনু ওমর (রাঃ) বলতেন, সন্ধ্যা এলে তুমি সকালের অপেক্ষা করো নাসকাল এলে তুমি সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না তুমি তোমার অসুখের পূর্বে সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার পূর্বে জীবনকে কাজে লাগাও।[32] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুমআর খুৎবাতে অধিকাংশ সময় সূরা ক্বাফ থেকে পাঠ করে শুনাতেনকেননা সেখানে রয়েছে মৃত্যু ও আখেরাতের বাস্তব বাণীচিত্র সমূহ বিশেষ করে ২-৩, ১৬-৩০ পর্যন্ত আয়াতগুলিতন্মধ্যে ২২-২৫ চারটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি এই দিবস সম্পর্কে উদাসীন ছিলেএখন তোমার সম্মুখ হতে পর্দা সরিয়ে দিয়েছিঅতএব আজ তোমার দৃষ্টি প্রখরতার সঙ্গী ফেরেশতা বলবে, এই তো আমার নিকট তার আমলনামা প্রস্ত্তত‘(তখন আদেশ করা হবে) তোমরা উভয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর প্রত্যেক উদ্ধত অবিশ্বাসীকেকল্যাণ কর্মে বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে’ (ক্বাফ ৫০/২২-২৫) নেককার ও বদকার প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং প্রত্যেকেই কাফন পরে কবরে যাবেকিন্তু সেখানে গিয়ে কেউ আগুনের খোরাক হবে এবং কেউ জান্নাতের সুবাতাস পেয়ে ধন্য হবেকেউ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত ভয়ংকর ফেরেশতার প্রচন্ড হাতুড়ি পেটা খাবে, কেউ জান্নাতের সুগন্ধিতে নববিবাহিতের ন্যায় সুখনিন্দ্রায় ঘুমিয়ে যাবেকারু কবর সংকীর্ণ হবে ও দুই পার্শ্ব চেপে ধরে তাকে পিষ্ট করবেকারু কবর প্রশস্ত ও আলোকিত হবেনিদ্রার মধ্যে দুঃস্বপ্নে মানুষ ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে বা আনন্দে হেসে ওঠেএটা যেমন সবাই বাস্তব বলে মেনে নিচ্ছেতাহলে চিরনিদ্রার জগতে এটা অসম্ভব হবে কেন? অতএব বুদ্ধিমান মানুষের সাবধান হওয়া উচিত জ্ঞানী মানুষদের কিছু উক্তি : (১) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কিভাবে সকাল করেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, এমন অবস্থায় যে, আমি ফিৎনাকে ভালবাসি ও হক-কে অপসন্দ করিবলা হ, সেটা কেমন? তিনি বললেন, আমি আমার সন্তানকে ভালবাসি ও মৃত্যুকে অপসন্দ করি। [33] (২) ক্বায়েস বিন আবু হাযেম (মৃ. ৯৩ হি.) বনু উমাইয়াদের একজন খলীফার দরবারে গেলে তিনি বলেন, হে আবু হাযেম! আমাদের কি হ যে আমরা মৃত্যুকে অপসন্দ করছি? জওয়াবে তিনি বলেন, এটা এজন্য যে, আপনারা আপনাদের আখেরাতকে নষ্ট করেছেন ও দুনিয়াকে আবাদ করেছেনসেকারণ আপনারা আবাদী স্থান থেকে অনাবাদী স্থানে যেতে চান না।[34] (৩) হাসান বাছরী (২১-১১০ হি.) বলেন, হে আদম সন্তান! মুমিন ব্যক্তি সর্বদা ভীত অবস্থায় সকাল করে, যদিও সে সৎকর্মশীল হয়&a কেননা সে সর্বদা দুটি ভয়ের মধ্যে থাকে। (ক) বিগত পাপ সমূহের ব্যাপারেসে জানেনা আল্লাহ সেগুলির বিষয়ে কি করবেন। (খ) মৃত্যুর ভয়, যা এখনো সামনে আছে সে জানেনা আল্লাহ তাকে তখন কোন পরীক্ষায় ফেলবেনঅতএব আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির উপরে, যে এগুলি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে ও জ্ঞান হাছিল করে দূরদর্শিতা লাভ করে এবং নিজেকে প্রবৃত্তি পরায়ণতা থেকে বিরত রাখে।[35] তিনি বলতেন, দুনিয়া তিনদিনের জন্যগতকাল, যে তার আমল নিয়ে চলে গেছে আগামীকাল, সেটা তুমি নাও পেতে পারআজকের দিন, এটি তোমার জন্যঅতএব তুমি এর মধ্যে আমল কর’ (পৃ. ৩৩)।[36] জনৈক ব্যক্তি তাকে কুশল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির অবস্থা কেমন থাকবে, যে সকাল-সন্ধ্যা মৃত্যুর প্রতীক্ষা করে? সে জানেনা আল্লাহ তার সাথে কি ব্যবহার করবেন’ (উক্তি ৪৯)।[37] তিনি যখন কোন জানাযা পড়াতেন, তখন কবরের মধ্যে উঁকি মেরে জোরে জোরে বলতেন, কত বড়ই না উপদেশদাতা সেযদি জীবিত অন্তরগুলি তার অনুগামী হত! (পৃ. ৫১-৫২)।[38] তাঁকে একদিন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আপনি কেমন আছেন? জবাবে তিনি বলেন, তুমি আমাকে আমার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ? আচ্ছা ঐ ব্যক্তিদের সম্পর্কে তোমার কি ধারণা যারা একটি নৌকায় চড়ে সাগরে গেছেঅতঃপর মাঝ দরিয়ায় গিয়ে তাদের নৌকা ভেঙ্গে গেছেতখন তারা যে যা পেয়েছে কাঠের টুকরা নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেলোকটি বলল, সেটা তো বড় ভয়ংকর অবস্থাহাসান বাছরী বললেন, আমার অবস্থা তার চাইতে কঠিন’ (উক্তি ১৭, পৃ. ২০)।[39] এতবড় একজন বিখ্যাত তাবেঈ, আবেদ, যাহেদ, দুনিয়াত্যাগী ব্যক্তির যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ ভেবে দেখা কর্তব্য (৪) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হি.) একদিন বাগদাদের বাজারে এলেন অতঃপর এক বোঝা কাঠ খরিদ করে কাঁধে নিয়ে চলতে শুরু করলেনঅতঃপর যখন লোকেরা তাকে চিনে ফেলল, তখন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে, দোকানদাররা দোকান ছেড়ে, পথিকরা পথ চলা বন্ধ করে তাঁর কাছে ছুটে এল ও সালাম দিয়ে বলতে লাগল, আমরা আপনার বোঝা বহন করবতখন তাঁর হাত কেঁপে উঠল, চেহারা লাল হয়ে গেল, দুচক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলঅতঃপর তিনি বারবার বলতে থাকলেন, আমরা মিসকীনযদি আল্লাহ আমাদের পাপ ঢেকে না দেন, আমরা অবশ্যই সেদিন লাঞ্ছিত হব’ (পৃ. ২১-২২)। (৫) মুহাম্মাদ বিন ওয়াসেবাছারী (মৃ. ১২৩ হি.)-কে জিজ্ঞেস করা হ কিভাবে আপনি সকাল করেছেন? জবাবে তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা, যে ব্যক্তি প্রতিদিন পরকালের পথ পাড়ি দিচ্ছে? (উক্তি ২০)।[40] (৬) ছাহাবী আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, তিনজন লোককে দেখলে আমার হাসি পায়। (ক) দুনিয়ার আকাংখীঅথচ মৃত্যু তাকে খুঁজছে (খ) উদাসীন ব্যক্তিঅথচ আল্লাহ তার থেকে উদাসীন নন (গ) গাল ভরে হাস্যকারী ব্যক্তিঅথচ সে জানেনা আল্লাহ তার উপর খুশী না নাখোশ’ (পৃ. ২২)।[41] (৭) আসওয়াদ বিন সালেম (মৃ. ২১৪হি.)-কে বলা হল আপনি আজ কিভাবে সকাল করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, মন্দভাবেকেননা আজ একজন বিদআতীর প্রতি আমার দৃষ্টি পড়েছে’ (উক্তি ২২, পৃ. ২৩)। (৮) বিখ্যাত তাবেঈ ও কূফার বিচারপতি ক্বাযী শুরাইহ-কে জিজ্ঞেস করা ল আপনি আজ কিভাবে সকাল করলেনতিনি বললেন, এমন অবস্থায় যে, অর্ধেক মানুষ আমার উপর ভীষণ ক্রুদ্ধ’(أَصْبَحْتُ وَنِصْفُ النَّاسِ عَلَىَّ غِضَابٌ) (উক্তি ২৩, পৃ. ২৩-২৪)।[42] (৯) ফুযায়েল বিন মাসঊদ (মৃ. ১৮৭ হি.)-কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আপনি কেমন আছেন? জওয়াবে তিনি বললেন, যদি তুমি আমার দুনিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর, তবে আমি বলব যে, দুনিয়া আমাদেরকে যেখানে খুশী নিয়ে চলেছেআর যদি আখেরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাক, তাহলে ঐ ব্যক্তির অবস্থা কি জানবে যার পাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ও নেক আমল কম হয়েছেযার বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ তার পরকালের জন্য পাথেয় সঞ্চিত হয়নিমৃত্যুর জন্য প্রস্ত্ততি নেয়নি, তার জন্য বিনত হয়নি, তার জন্য পা বাড়ায়নি, তার জন্য আমলকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেনিঅথচ দুনিয়ার জন্য সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে’? (উক্তি ২৯, পৃ. ২৭)।[43] (১০) আবু সুলায়মান দারানী (মৃ. ২১৫ হি.) স্বীয় উস্তায উম্মে হারূণকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি কেমন থাকবে যার রূহ অন্যের হাতে’? (উক্তি ৪৫, পৃ. ৩৭)।[44] তিনি আরেকবার তাঁকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি মৃত্যুকে ভালবাসেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তির অবাধ্যতা করলে, তার সাক্ষাৎ পসন্দ করি নাতাহলে আমি কিভাবে আল্লাহর সাক্ষাৎ পসন্দ করব, অথচ আমি তার অবাধ্যতা করছি?[45] (১১) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হল আপনি কিভাবে সকাল করলেন? তিনি বললেন, সকালে আমি আমার রবের দেওয়া রূযী খাইআর আমি তার শত্রু ইবলীসের আনুগত্য করি’ (উক্তি ৫৭, পৃ. ৪২)।[46] (১২) আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর ভয়ে এক ফোঁটা অশ্রুপাত আমার নিকট এক হাযার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ছাদাক্বা করার চাইতে অধিক প্রিয়’ (পৃ. ২৮)।[47] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহর ছায়াতলে আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হল তারাই, যারা আল্লাহকে নির্জনে-নিরালায় স্মরণ করেঅতঃপর তাদের দুচোখ বেয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।[48] (১৩) রবীবিন খায়ছাম (মৃ. ৬৫ হি.) বাড়ীতে কবর খুঁড়ে রাখেন যেখানে তিনি দিনে একাধিকবার ঘুমাতেনযাতে সর্বদা মৃত্যুর কথা মনে পড়ে।[49] তিনি বলতেন, لَوْ فَارَقَ ذِكْرُ الْمَوْتِ قَلْبِي سَاعَةً فَسَدَ عَلِيَّযদি আমার অন্তর এক মুহূর্ত মৃত্যুর স্মরণ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে তা আমাকে বিনষ্ট করে দেয়।[50] (১৪) মুত্বার্রিফ বিন আব্দুল্লাহ (মৃ. ৯৫ হি.) বলেন, মৃত্যু সচ্ছল ব্যক্তির সুখ-সম্ভারকে কালিমালিপ্ত করে দেয়অতএব তুমি এমন সুখের সন্ধান কর, যেখানে কোন মৃত্যু নেই।[51] (১৫) ইব্রাহীম তায়মী (মৃ. ১২০ হি.) বলেন, দুটি বস্ত্ত আমার দুনিয়ার স্বাদ বিনষ্ট করেছেমৃত্যুর স্মরণ ও আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার ভয়।[52] (১৬) কাব বলতেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুকে উপলব্ধি করে, দুনিয়ার বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা সমূহ তার নিকট হীন বস্ত্ত হয়ে যায়।[53] (১৭) ওমর বিন আব্দুল আযীয জনৈক আলেমকে বলেন, আপনি আমাকে উপদেশ দিনতিনি বললেন, আপনিই প্রথম খলীফা নন, যিনি মৃত্যুবরণ করবেনখলীফা বললেন, আরও উপদেশ দিনতিনি বললেন, আদম পর্যন্ত আপনার বাপ-দাদাদের এমন কেউ ছিলেন না যিনি মৃত্যুবরণ করেননি এবার আপনার পালাএকথা শুনে খলীফা কেঁদে ফেলেনতিনি প্রতি রাতে আলেম-ওলামাদের নিয়ে বৈঠক করতেনযেখানে মৃত্যু, ক্বিয়ামত ও আখেরাত নিয়ে আলোচনা হতখন তারা এমনভাবে ক্রন্দন করতেন, যেন তাদের সামনেই জানাযা উপস্থিত হয়েছে।[54] (১৮) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তি তার এক বন্ধুর নিকটে লেখেন, হে বন্ধু! ইহকালে মৃত্যুকে ভয় কর, পরকালে যাওয়ার আগেযেখানে তুমি মৃত্যু কামনা করবে, অথচ মৃত্যু হবে না।[55] দ্রুত সৎকর্ম সম্পাদন : অতএব হে মানুষ! মৃত্যু আসার আগেই প্রস্ত্ততি গ্রহণ করোদুনিয়ার চাকচিক্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলো নাঅবিশ্বাসীদের ধোঁকায় পড়ো নাআল্লাহ বলেন, فَلا تَعْجَلْ عَلَيْهِمْ إِنَّمَا نَعُدُّ لَهُمْ عَدًّاতুমি তাদের বিষয়ে ব্যস্ত হয়ো নাআমরা তো তাদের জন্য নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময়কাল গণনা করছি’ (মারিয়াম ১৯/৮৪)অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের প্রতিটি নিঃশ্বাস গণনা করেন বান্দা কোন কাজে সেটি ব্যয় করছে, তার হিসাব রাখেনসে তার মৃত্যুর দিকে আলোর গতিতে প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কি.মি. বেগে এগিয়ে চলেছেঅতএব হে মানুষ! তুমি দ্রুত সৎকর্ম সম্পাদন করবলো না যে, কাজটি আমি আগামীকাল করবযেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেছেন,وَلاَ تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا- إِلاَّ أَنْ يَشَاءَ اللهُ... ‘আর তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ওটা আমি আগামীকাল করবযদি আল্লাহ চানবলা ব্যতিরেকে...’ (কাহফ ১৮/২৩-২৪)তিনি বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করআর প্রত্যেকে ভেবে দেখুক আগামীকালের (ক্বিয়ামতের) জন্য সে কি অগ্রিম পাঠিয়েছে তোমরা আল্লাহকে ভয় করনিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (হাশর ৫৯/১৮)আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের নিকট দায়বদ্ধ‘(আনুগত্যের কারণে) ডান সারির লোকেরা ব্যতীততারা জান্নাতে থাকবেতারা পরস্পরে জিজ্ঞেস করবে’- ‘পাপীদের বিষয়েকোন বস্ত্ত তোমাদেরকে সাক্বারে (জাহান্নামে) প্রবেশ করিয়েছে’? ‘তারা বলবে, আমরা মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম নাআমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম নাআমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনায় মগ্ন থাকতামআমরা বিচার দিবসকে মিথ্যা বলতামঅবশেষে আমাদের কাছে এসে গেল মৃত্যুফলে সুফারিশকারীদের সুফারিশ তাদের কোন কাজে আসবে নাঅতঃপর তাদের কি হল যে, তারা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়’? ‘তারা যেন পলায়নপর বন্য গাভীযে শিকারী সিংহ দেখে পালায়’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩৮-৫১) ক্বিয়ামত দিবসে মানুষের অবস্থা : আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবেকোনকিছু্ই তোমাদের গোপন থাকবে নাঅতঃপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, এসো তোমরা আমার আমলনামা পড়ে দেখ’! ‘আমি নিশ্চিত জানতাম যে, আমাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবেঅতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবেসুউচ্চ জান্নাতেযার ফলসমূহ নীচু হয়ে নিকটে আসবে‘(বলা হবে) তোমরা খুশীমনে খাও ও পান কর বিগত দিনে (দুনিয়াতে) যেসব সৎকর্ম করেছিলে তার প্রতিদানেঅতঃপর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! যদি আমাকে এ আমলনামা না দেওয়া হ’! ‘এবং আমি যদি আমার হিসাব না জানতাম’! ‘হায়, মৃত্যুই যদি আমার চূড়ান্ত পরিণতি হ’! ‘আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজে আসল নাআমার রাজনৈতিক ক্ষমতা বরবাদ হয়ে গেল‘(তখন ফেরেশতাদের বলা হবে) ধরো একেঅতঃপর বেড়ী পরাও একেঅতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ কর একেঅতঃপর সত্তুর হাত লম্বা শিকল দিয়ে শক্তভাবে বাঁধো একেসে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল নাসে অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে উৎসাহ প্রদান করত নাঅতএব আজকে এখানে তার কোন বন্ধু নেইআর তার জন্য কোন খাদ্য নেই দেহ নিঃসৃত পূঁজ-রক্ত ব্যতীতযা কেউ খাবে না পাপীরা ব্যতীত’ (হা-ক্কাহ ৬৯/১৮-৩৭)অতএব আসুন! আমরা মৃত্যুর আগেই সাবধান হইআল্লাহ আমাদেরকে তাঁর জান্নাতী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন! [1]. হাকেম হা/৭৯২১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩১ [2]. তিরমিযী হা/২৩০৭; ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৮; নাসাঈ হা/১৮২৪; মিশকাত হা/১৬০৭ [3]. তিরমিযী হা/১০৭১; মিশকাত হা/১৩০ কবরের আযাবঅনুচ্ছেদ [4]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৭২; মিশকাত হা/১৩৮ [5]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৮; মিশকাত হা/১৩৯ [6]. বুখারী হা/১৩৬৯; মুসলিম হা/২৮৭১; মিশকাত হা/১২৫ [7]. আবুদাঊদ হা/৪৭৫৩; মিশকাত হা/১৩১ [8]. বুখারী হা/১৩৭৪; মুসলিম হা/২৮৭০; মিশকাত হা/১২৬ [9]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৮; মিশকাত হা/১৩৯ [10]. আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; বুখারী হা/১৩৭৪; মিশকাত হা/১৩১, ১২৬ [11]. তিরমিযী হা/১০৭১; মিশকাত হা/১৩০ [12]. তিরমিযী হা/২৩০৮; ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৭; মিশকাত হা/১৩২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৫৫০ [13]. বুখারী হা/৪৭৭৯; মুসলিম হা/২৮২৫; মিশকাত হা/৫৬১২ [14]. বুখারী হা/৩২৫০; মিশকাত হা/৫৬১৩ [15]. নবীদের কাহিনী ২/৪৩-৪৪ [16]. মুসলিম হা/১৮১; মিশকাত হা/৫৬৫৬ আল্লাহকে দর্শনঅনুচ্ছেদ [17]. বুখারী হা/৭৪৩৪; মুসলিম হা/৬৩৩; মিশকাত হা/৫৬৫৫ [18]. বুখারী হা/৬৩৪৮; মুসলিম হা/২৪৪৪; মিশকাত হা/৫৯৬৪; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৭৪৩ পৃ. [19]. মুসলিম হা/২৯৫৬; মিশকাত হা/৫১৫৮ [20]. বুখারী হা/৬৫০৮; মুসলিম হা/২৬৮৩; মিশকাত হা/১৬০১ [21]. আহমাদ হা/১০৮৭৮; ছহীহাহ হা/৫৭৮ [22]. মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৪৪৫ [23]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯; ছহীহাহ হা/১৩৮৪ [24]. মুসলিম হা/৪২৬ [25]. কুরতুবী, আত-তাযকিরাহ বি আহওয়ালিল মাওতা ৩০৬ পৃ. [26]. বুখারী হা/৬৬০৭; মিশকাত হা/৮৩ [27]. আহমাদ হা/২৩৩৭২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯৮৫ [28]. বুখারী হা/৪৭; মুসলিম হা/৯৪৫; মিশকাত হা/১৬৫১ [29]. মুসলিম হা/৯৭৭; মিশকাত হা/১৭৬২ [30]. মুসলিম হা/৯৭৬; মিশকাত হা/১৭৬৩ [31]. বুখারী হা/৬৪১৮; মিশকাত হা/৫২৬৯ [32]. বুখারী হা/৬৪১৬; মিশকাত হা/১৬০৪ [33]. আয়মান আশ-শাবান, কায়ফা আছবাহতা (রিয়ায : মাকতাবা কাওছার ১৪৩৫/২০১৪), উক্তি সংখ্যা ৯, ১২ পৃ.বইটিতে মোট ৮১টি উক্তি ও অন্যান্য উপদেশ রয়েছে [34]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ২২/৩০ [35]. ইবনুল জাওযী, আদাবুল হাসান বাছরী, ১২৩ পৃ. [36]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, আয-যুহদ, ১৯৭ পৃ. [37]. ইবনু হিববান, রওযাতুল উকালা, ৩২ পৃ. [38]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ক্বাছরুল আমাল, ১৪৫ পৃ. [39]. আবুবকর আল-মারূযী, আখবারুশ শুয়ূখ ওয়া আখলাক্বিহিম ১৮৩ পৃ. [40]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৫৬/১৬৯ [41]. ইবনুল মুবারক, আয-যুহুদ (বৈরূত) ৮৪ পৃ. [42]. আল-খাত্ত্বাবী, গারীবুল হাদীছ ১/৫০৩ কূফার খ্যাতনামা ক্বাযী শুরাইহ ছিলেন ন্যায়বিচারক হিসাবে অদ্বিতীয়যামিন হওয়ার পর আসামী পালালে যামিনদার নিজের ছেলেকে তিনি জেলে পাঠান ও তার জন্য নিজে জেলখানায় খাবার নিয়ে যানক্ষুধার্ত ও রাগান্বিত হলে তিনি এজলাস থেকে উঠে যেতেনএকবার একজনকে চাবুক মারলে পরে ভুল বুঝতে পেরে তিনি নিজের পিঠ পেতে দিয়ে তার কাছ থেকে ক্বিছাছ নিয়ে নেন’ (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ৬/১৩১-১৪৪)সৈয়ূতী বর্ণনা করেন, ক্বাযী শুরাইহ বিন হারিছ বিন ক্বায়েস আল-কিন্দী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগ পেয়েছিলেনকিন্তু তাঁর সাথে সাক্ষাৎ ঘটেনিতিনি হযরত ওমর, ওছমান, আলী ও মুআবিয়া (রাঃ) সহ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ-এর যুগ (৭৬-৯৬ হি.) পর্যন্ত একটানা ৬০ বছর বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেনতিনি ১২০ বছর বেঁচেছিলেনমৃত্যুর একবছর পূর্বে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি নেনতাঁর মৃত্যুর সন বিষয়ে ৭৮ হি., ৮০, ৮২, ৮৭, ৯৩, ৯৬, ৯৭ ও ৯৯ বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে (সৈয়ূতী, ত্বাবাক্বাতুল হুফ্ফায (কায়রো ১৩৯২/১৯৭৩) ক্রমিক সংখ্যা ৪২, পৃঃ ২০) [43]. আবু নুআইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৮/৮৫-৮৬ [44]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব ৭০/২৬৬ [45]. আবু হামেদ আল-গাযালী, এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯ [46]. , ৩/১৬৮ [47]. বায়হাক্বী শোআবুল ঈমান হা/৮৪২ [48]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১ [49]. এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯ [50]. আবু নুআইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/১১৬ [51]. এহইয়াউ উলূমিদ্দীন ৭/১৩৯ [52]. , ৭/১৩৮ [53]. , ৭/১৩৮ [54]. , ৭/১৩৯ [55]. , ৭/১৩৮

No comments: